জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ অক্টোবর ১৮, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3298 বার
গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও পানিপথে হজে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সৌদি আরব সরকারকে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে ২০২৫ সালের জুনের হজযাত্রায় পানিপথের যাত্রা প্রক্রিয়া সম্ভব হবে কিনা, এখনও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের যে ভূখণ্ড, এখান থেকে সমুদ্রপথে হজে যাওয়ার ইতিহাস সুলতানি আমল থেকে। যার গোড়াপত্তন হয়েছিল ১২০৪ সালে। তখন পালতোলা জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হজযাত্রী পরিবহনের ইতিহাস রয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ আমলে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় ১৯৮০ সালের দিকে হিজবুল বাহার নামের জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সমুদ্রপথে হজযাত্রীরা হজে গিয়েছিলেন। এরপর এরশাদের শাসনামলে আকাশপথে হজযাত্রীরা মক্কা-মদিনায় যাওয়া শুরু করেন।
দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও আকাশপথের পাশাপাশি সমুদ্রপথে বা পানিপথে হজযাত্রী পাঠানোর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। উদ্দেশ্য, হজযাত্রীদের খরচ কমানো।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার চাইলেও সৌদি আরবকেও এ বিষয়ে রাজি হতে হবে। তারা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুমোদন করলে তখন সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর পরবর্তী কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা হবে। কারণ বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়টি কয়েক বছর ধরে আলোচিত হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, দীর্ঘ সময় এবং নানা চ্যালেঞ্জের কারণে আগের সরকার এতে খুব একটা আগ্রহী হয়নি। তা ছাড়া সৌদি সরকারেরও এ বিষয়ে অনুমতি মেলেনি। কিন্তু সমুদ্রপথে জাহাজে হজযাত্রী পরিবহনে খরচ কম হওয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে খুবই আগ্রহী।
গত ৬ অক্টোবর সৌদি আরবের জেদ্দায় সৌদি হজ ও ওমরাহ বিষয়ক-মন্ত্রী ড. তাওফিক ফাউযান আল রাবিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বৈঠক করেন। বৈঠকে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাব দিলে সৌদি সরকারের তরফ থেকে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক।
তিনি বলেন, সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে ধর্ম উপদেষ্টার প্রস্তাবে সৌদি হজ ও উমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী জানান, সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের কোনও আপত্তি নেই। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি আরও জানান, এ বছর পরীক্ষামূলক পানিপথে জাহাজযোগে দুই-তিন হাজার হজযাত্রী পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার চিন্তাভাবনা করছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহে পরবর্তী পবিত্র হজ পালিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী হজ পালনে সৌদি আরবে যেতে পারবেন। হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ নভেম্বর। আর জাহাজে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠাতে হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব কার্যক্রম শেষ করতে হবে। যে কারণে এ বছর এই প্রক্রিয়া শেষ করার সম্ভাবনা কম। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে তিন লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে হজযাত্রীদের প্রাথমিক নিবন্ধন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ এ বিষয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সৌদি সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে মিনা ও আরাফায় তাঁবু নির্ধারণ ও সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন কার্যক্রম ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। তাঁবু বরাদ্দ প্রদান করার ক্ষেত্রে ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ নীতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। এ কারণে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজযাত্রী নিবন্ধন শেষ না হলে মিনা ও আরাফায় কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। তাঁবু গ্রহণ ও সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে দেরি হলে হজযাত্রীদের জামারাহ থেকে অনেক দূরে পাহাড়ি এলাকা কিংবা নিউ মিনা এলাকায় অবস্থান করতে হবে। ফলে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে দীর্ঘপথ হাঁটতে হবে, যা হজযাত্রীদের জন্য কষ্টকর।
পানিপথে জাহাজে হজযাত্রী পরিবহন করা গেলে আকাশপথেরে চেয়ে ৪০ শতাংশ খরচ কমে যাবে। যাওয়া-আসায় আট দিন করে ১৬ দিন এবং হজ পালনসহ মোট এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে। আগে যখন সমুদ্রপথে হজযাত্রীরা যেতেন, তখন সময় লাগতো ২৮ দিনের মতো; যেতে ১৪ দিন ও আসতে ১৪ দিন সময় লাগতো। বর্তমানে সমুদ্রপথে এর অর্ধেক সময়েই হজযাত্রীরা যেতে পারবেন। সৌদি আরব সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ যদি জাহাজে হজযাত্রী পাঠানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকে, তখন আগামী জানুয়ারিতে হজ চুক্তিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গত কয়েক বছরে হজের খরচ অনেক বেড়েছে। এ বছর (২০২৪) সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয় ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনে খরচ হয়েছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। খরচ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত কোটার চেয়ে এ বছর ৪১ হাজার ৯৪১ জন কম মানুষ হজ পালন করেছেন। আগামী বছরের হজ প্যাকেজ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তবে আগের তুলনায় খরচ কমানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বলেন, গত বুধবার তারা পানিপথে হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছেন সৌদি কর্তৃপক্ষকে। এখন তাদের জবাবের অপেক্ষা। তাদের অনুমতি মিললে কিংবা জাহাজ কেনা কিংবা ভাড়ার বিষয়ে জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলতে হবে। চেষ্টা চলছে এ বছরই পানিপথে হজযাত্রী পাঠানোর। সম্ভব না হলে আগামী বছর ইনশাআল্লাহ এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা যাবে। এরই মধ্যে কয়েকটি জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করে রাখা হয়েছে।