আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আরাকান আর্মির সৈন্যরা ১৬ ফেব্রুয়ারি মেবন টাউনশিপে জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে জব্দ করা অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক ট্রাক নিয়ে পোজ দিচ্ছে

রাখাইনের উত্তর অঞ্চল থেকে জান্তা সৈন্য প্রত্যাহার করছে এবং রাজ্যের দক্ষিণে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ) । “কারণ তারা জানে যে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যে যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে।” বলছে বিদ্রোহী গ্রুপটি।

রবিবার রাখাইন রাজ্যের মায়বন টাউনশিপের দুটি পাহাড়ের চূড়া থেকে জান্তা তাদের সৈন্যদের বিমান দিয়ে সরিয়ে নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণে পাঠানোর পর এএ বিবৃতি দেয়। খবর ইরাবতির।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জান্তার সামরিক বাহিনী নিশ্চিতভাবে হেরে যাবে যদি তারা আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে। তাই আমরা যে শহরগুলো দখল করার চেষ্টা করছি সেখানে সামরিক ফাঁড়ি এবং পাহাড়ের চূড়া [ঘাঁটি] পুড়িয়ে দিয়ে তারা সেনা প্রত্যাহার করছে।

এএ জানিয়েছে, শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মায়বনের পয়েন্ট ৪০২ এবং ৪০৮ পাহাড়ের চূড়ায় জান্তা সেনারা ফাঁড়ির ভেতরে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং কামান ধ্বংস করে।

হিন খা কাঁচা গ্রামের প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ফাঁড়িগুলি থেকে তারা কেবলমাত্র অস্ত্রগুলি নিয়ে গেছে, যা তারা সঙ্গে বহন করতে পারে।

উত্তর রাখাইনের দুটি ফাঁড়ি থেকে সৈন্যদের দক্ষিণ রাখাইনের অ্যান টাউনশিপে জান্তার ওয়েস্টার্ন কমান্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। এএ বলেছে, জান্তা সৈন্যদের দুটি ঘাঁটি থেকে নিরাপদে নিয়ে যেতে চারটি ট্রিপ লেগেছে।

শাসক সেনারা রাখাইনের দক্ষিণে রামরিতে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ থেকে জনপদে আঘাত হানছে।

শনিবার জান্তার গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলায় ৪ নং কিং টেই ওয়ার্ডের অন্তত ১৫০টি বাড়ি পুড়ে গেছে। থিম তাউং প্যাগোডা পাহাড়ে অবস্থানরত জান্তা সেনারাও রবিবার রামরি টাউনে আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে। সপ্তাহান্তে রাজ্যের অন্যান্য শহরে সংঘর্ষ চলতে থাকে, তবে সেগুলি গত সপ্তাহের মতো ভারী ছিল না।

এএ রাজ্যের সব জান্তা ঘাঁটি এবং আউটপোস্টগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যতক্ষণ না ভিতরে যারা রয়েছে তারা আত্মসমর্পণ করে।

আরাকান আর্মি রবিবার দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে, জান্তার সামরিক বাহিনী এখনও রাখাইন রাজ্যে তার ব্যর্থতার বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারে না এবং এটি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস করার এবং পরিবহন, তথ্য ও পণ্যের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে পশ্চিম রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ করেছে।

ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স বেসামরিক নাগরিকদের রাখাইন রাজ্যে ল্যান্ডমাইনের ক্রমবর্ধমান বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছে, জান্তার সামরিক বাহিনী সেখানে তাদের ফাঁড়ি এবং ঘাঁটির চারপাশে ল্যান্ডমাইন স্থাপন করছে।

রাজ্যের বাসিন্দারা জান্তার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুরছে।

১৭ ফেব্রুয়ারি জান্তার সৈন্যরা কিয়াউকফিউ শহরে চারজন বেসামরিক নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছিল, যখন তারা মিন তাত তাউং গ্রামে তাদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিল। তাদের মুখ ঢেকে একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এএ হল ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের তিনটি জাতিগত সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি, যেটি গত বছরের ২৭ অক্টোবর উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে অপারেশন ১০২৭ চালু করেছিল।

১৩ নভেম্বর এএ উত্তর রাখাইন রাজ্যজুড়ে এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া টাউনশিপে শাসকদের লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে একটি বড় আকারের আক্রমণ শুরু করে।

উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জান্তার সামরিক বাহিনীকে অপমানিত করার পর এএ রাখাইন রাজ্যে একই কাজ করেছে। তারা ১৩ নভেম্বর থেকে ১৭০টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটি এবং ফাঁড়ি দখল করেছে। সেইসঙ্গে রাখাইন রাজ্যের ছয়টি শহর- পাউকতাও, কিউকতাও, মিনবিয়া, ম্রাউক-উ, তাংপিওলেটওয়ে ও মাইবোন এবং চিন রাজ্যের একটি পালেতোয়া দখল করে।