সারাবিশ্ব | তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 9606 বার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানে নির্বাচনি ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে তা বাতিল চেয়ে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন আলি খান নামে এক ব্যক্তি। উচ্চ আদালত পিটিশন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছে।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক বেঞ্চে রিটের শুনানি হবে। অপর দুই বিচারপতি হলেন, মোহাম্মদ আলী মাজহার এবং বিচারপতি মুসারাত হিলালি।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) এবং ফেডারেল সরকারকে এই মামলায় বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে ৩০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের আবেদন করেছেন আলি খান। এছাড়াও, আবেদনটি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন সরকার গঠনের উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।।
৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দেশের সাধারণ নির্বাচনে, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৫টি আসন, পিএমএল-এন ৭৫টি এবং পিপিপি ৫৪টি আসন লাভ করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পরাজিত প্রার্থীরা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।
ইতোমধ্যে সিন্ধু হাইকোর্টে করাচি এবং হায়দ্রাবাদের ৫৮টি নির্বাচনি এলাকার ফলাফলের বিরুদ্ধে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
সিন্ধু হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে যে, ইসিপি সমস্ত পক্ষের অভিযোগ শুনে এবং আইন অনুসারে ২২ ফেব্রুয়ারির আগে সিদ্ধান্ত নেবে এবং ফর্ম ৪৫ বা ৪৭-এ আবেদনকারীদের রেকর্ড পরীক্ষা করবে। রায়ে আরও বলা হয়, যেকোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে তা অপসারণ করা উচিত।
এদিকে কারচুপির বিরুদ্ধে বেলুচিস্তান, সিন্ধু এবং দেশের অন্যান্য অংশে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ন্যাশনাল পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, জমিয়ত-উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি, জামায়াত-ই-ইসলামী, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি- বিএপি, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি- বিএনপি (মেঙ্গল), পাশতুনখাওয়া মিল্লি আওয়ামী পার্টি, পাশতুনখাওয়া ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুনঃগণনার দাবিতে এবং বেলুচিস্তানে ঘোষিত ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান সড়ক ও জেলা রিটার্নিং অফিস ঘেরাও বিক্ষোভ করেছে।
বেলুচিস্তানে আঞ্চলিক দলগুলো সম্মিলিতভাবে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। পিটিআই ইসিপি সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছে। সিন্ধু প্রদেশে জেইউআই সড়ক যোগাযোগ অবরোধ করেছে এবং জামায়াত-ই-ইসলামি (জেআই) করাচির বিভিন্ন অংশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাকর্মীরা সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের সাথে সংযোগকারী মহাসড়ক অবরোধ করে। করাচিতে আটটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসে অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
বিক্ষোভের ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, যেকোনো ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের সমাবেশ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
এদিকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত একাধিক প্রার্থী তাদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে এক ডজনেরও বেশি পিটিশন দাখিল করেছেন, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা (আরও) ঘোষণা করেছেন। বেশিরভাগ নির্বাচনি পিটিশন লাহোর হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। পিটিআই-সমর্থিত দুই প্রার্থী ফলাফলের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে এবং সিন্ধ হাইকোর্টে অন্তত তিনটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নওয়াজ শরীফ এবং তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের বিজয়কে চ্যালেঞ্জ করে লাহোর হাইকোর্টে আবেদন করেছে ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির (আইপিপি) সভাপতি আলিম খান।
পিটিআই-সমর্থিত শোয়েব শাহীন এবং আলী বুখারি যথাক্রমে ফেডারেল রাজধানীর এনএ-৪৭ এবং এনএ-৪৮ নির্বাচনি এলাকার ফলাফলের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করেছেন। পিটিআই সিন্ধুর সভাপতি হালিম আদিল শেখ এনএ-২৩৮ ফলাফলের বিরুদ্ধে এবং আরসালান খালিদ এনএ-২৪৮ ফলাফলের বিরুদ্ধে সিন্ধু হাইকোর্টে আবেদন করেছেন।
পিটিশনে প্রার্থীরা নির্বাচনি ফরম-৪৫ ও ফরম-৪৭ এ ফলাফল সমন্বয়ের সময় কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। ফরম-৪৭ এ ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগে তারা ভোট পুনঃগণনার দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে একাধিক পিটিশনে আদালত নির্বাচন কমিশনকে পুনরায় ভোট গণনা করে ফলাফল ঘোষণার নির্দেশনা দিয়েছে।
পিটিআিই সমর্থিত আবেদনকারীরা এনএ-১৩০ থেকে নওয়াজ শরিফ, এনএ-১১৯ থেকে মরিয়ম নওয়াজ, এনএ-৭১ শিয়ালকোট থেকে খাজা আসিফ, এনএ-১১৮ থেকে হামজা শেহবাজ, এনএ-১২৭ থেকে আত্তা তারার, এনএ-১২৬ থেকে সাইফুল মালুক খোকারের জয়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এছাড়া এনএ-১১৭ আসনে ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করেছেন আইপিপি সভাপতি আলিম খান।