জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ অক্টোবর ৫, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1676 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে আজ পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করবে রাশিয়া। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক শক্তি-ব্যবহারকারী দেশ হতে যাচ্ছে।
দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠান উপলক্ষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্রাজুয়েশন সেরিমনির আয়োজন করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুপুর ২টায় যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত থাকবেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান এবং পারমাণবিক জ্বালানির সনদ ও মডেল হস্তান্তরের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সফলভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তুত। অতিথিরা চারটি পয়েন্ট থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ও বক্তৃতা দেবেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ইউনিটের জ্বালানি ‘ফ্রেস নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান পৌঁছায়। বিশেষ নিরাপত্তাবলয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম বহনকারী গাড়িবহর রূপপুর প্রকল্প এলাকায় পৌঁছায়। ইউরেনিয়াম আসার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে জ্বালানি এলেও কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। জনগণের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছাবে ২০২৫ সালের শুরুতে।
রাশিয়ান ঠিকাদার হিসাবে রোসাটম, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিটি ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত।
প্রথম ইউনিটের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। দ্বিতীয় ইউনিটের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। তিনি জানান, আগামী এপ্রিলের মধ্যে প্রথম ইউনিট জ্বালানি স্থাপনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে। সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হলে ইউরেনিয়াম ফুয়েল স্থাপন করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। কারণ এটি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। একই সময়ে এটি ফ্ল্যাশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়ে দেবে।
একবার পারমাণবিক জ্বালানি পাওয়ার প্ল্যান্টের চুল্লিতে লোড করা হলে, এক বছরের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এর পরে, জ্বালানী চুল্লিতে পুনরায় লোড করতে হবে।
প্রকল্পের লে-আউটে বলা হয়েছে, আরএনপিপি প্রতিদিন ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগ নিশ্চিত করবে।
প্রকল্পটিতে ৭,০০০ পেশাদারসহ ৩০,০০০ জন কর্মী কাজ করছেন। প্রকল্পটি ৬০-৮০ বছর ধরে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট অনুসারে পরমাণু শক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে রয়েছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া।
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।