নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকার বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট নামের যে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সিলগালা করেছে, তাতে কাজ করতেন দুইশর বেশি কর্মী। এছাড়াও সেখানে রোগী দেখতেন বিশেষজ্ঞসহ অর্ধশতাধিক চিকিৎসক।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযানের নামে তড়িঘড়ি করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এর ফলে প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের দুই শতাধিক কর্মী বেকার হয়ে পড়লেন।

অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে সাংবাদিকসহ কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কী কারণে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করা হলো তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেননি।

প্রতিষ্ঠানটির সামনে দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক খন্দকার আশফাক। তিনি অভিযোগ করেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কিছু ব্যক্তির ইন্ধনে অবৈধভাবে পরিদর্শনের নামে তালা লাগিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

খন্দকার আশফাক বলেন, ‘অতি উৎসাহী হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রেসক্রিপশন পয়েন্টকে কার্যক্রম বন্ধ করতে একের পর এক নোটিশ দিয়ে আসছিল। আজকে তারা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে নিজেরাই নোটিশ ঝুঁলিয়ে দেয়।’

নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘অনিবার্য কারণবশত প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লি. সাময়িক বন্ধ থাকবে।’ তবে কোন কর্তৃপক্ষ নোটিশটি ঝুলিয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি নোটিশে।

অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসা প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার দখলে নিতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। তারাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগসাজশ করে অভিযানের নামে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করেছে।

খন্দকার আসফাক জানান, গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন দল প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট পরিদর্শন করে। পরে ২২ মে পেছনের তারিখ দেখিয়ে একটি চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অমান্য; অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণের হয়রানি; মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট এবং অদক্ষ জনবলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অভিযোগ আনা আনা হয়।

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই তিনটি কারণ দেখিয়ে আমাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করার আদেশ দেয়। আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়। নিয়মানুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আপিল করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে জানিয়ে প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের পরিচালক বলেন, রিটটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এরপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আজকে আবার এসে বন্ধ ডায়গনেস্টিক সেন্টারে সিলগালা করে দিলো।’

খন্দকার আশফাক বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট গত ১৬ বছর ধরে বনানীর ভাড়া বাড়িটিতে পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ৬ কোটি টাকা দলিলমূল্যে জায়গাটি ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়।’

‘অথচ বনানীর মতো বাণিজ্যিক এলাকায় এই সম্পত্তির দাম ৪৫ কোটি টাকার বেশি। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামমাত্র মূল্যে এই সম্পত্তি কিনে নিলেও আমাদেরকে বাড়ি ছাড়ার কোনো নোটিশও দেয়নি। বরং তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে এই প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।’

প্রশ্ন ওঠা এই অভিযানে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল। এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে আসবেন জানিয়ে আমাদের সহায়তা চেয়েছিল। পরে থানা পুলিশ সেখানে গিয়েছে।’

অন্যদিকে ওই অভিযানের সময় থাকা ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ইরতেজা হাসান গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি। প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট সেন্টারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগের অভিযানেও তিনি ছিলেন।