ঝিকরগাছা প্রতিনিধি: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার দুইটি কলেজে এস এস সি ও দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এরমধ্যে বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে ১৩ বছর এবং গঙ্গানন্দপুর ডিগ্রি কলেজে ৭ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহনের অসুবিধার কথা নিয়ে ভাবেননি যশোর শিক্ষাবোর্ড এবং জেলা প্রশাসন। অভিভাবকেরা এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের আশা করছেন।

বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে ২০১৫ সাল থেকে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ইতিমধ্যে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় ওই কলেজে আর পরীক্ষা কেন্দ্র নাই। এই দুইটা পরীক্ষায় কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায় দেড় থেকে দুই মাস পাঠ গ্রহনে বঞ্চিত ছিলেন। একইভাবে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ২০২০ সাল পর্যন্ত বহাল থাকার পর কেন্দ্রটি বর্তমানে বাঁকড়া জে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বাঁকড়া হাজিরবাগ আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে বাঁকড়া কলেজে দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা প্রায় ১ মাস পাঠ গ্রহনে বঞ্চিত হচ্ছেন। দাখিল পরীক্ষা (বাঁকড়া কলেজ) কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুকুন্দপুর আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন জানান ২০২১ সাল থেকে এ কলেজটি দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র করা হয়, এ বছর ১৩ টি মাদ্রাসার ২৭১ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ওই কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, কিছু দিন পরীক্ষা শুরুর আগে কলেজ আধঘন্টা করে ৩টি ক্লাস নেয়া হতো। বর্তমানে তা বন্ধ থাকায় আমাদের পাঠ গ্রহনে অসুবিধা হচ্ছে। বাঁকড়া মাঠ পড়া গ্রামের লিয়াকত আলী বলেন, আমার মেয়ে ওই কলেজের ছাত্রী, কলেজটিতে এসএসসি বা দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ঘাটতি হচ্ছে। আমি মনে করি মাধ্যমিকের পরীক্ষা কেন্দ্র মাধ্যমিক স্কুলে হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি।

বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সামছুর রহমান বলেন আমাদের শিক্ষার্থীরা মোটেও পাঠ বঞ্চিত হচ্ছে না। আমরা পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ১ টা ৩০ মিনিট থেকে ৫ টা পর্যন্ত আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকি। এ কলেজে প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।

অন্যদিকে উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ডিগ্রি কলেজে ২০১৫ সাল থেকে এসএসসি, জেএসসি, পিএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় এখন আর এই দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে না। তবে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে চলমান রয়েছে। গঙ্গানন্দপুর ডিগ্রি কলেজে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও গঙ্গানন্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর কলেজ কেন্দ্রে ১১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪৭৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এখানেও শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহনে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে গঙ্গানন্দপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস বলেন-২০১৫ সাল থেকে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষার কারণে একাদশ- দ্বাদশ, স্নাতক পাস এবং স্নাতক সন্মান শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যর্থ হচ্ছি। এটা শিক্ষার্থীদের জন্য অপুরনীয় ক্ষতিও বটে। এ বিষয়ে আমি মৌখিকভাবে জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোন ফল পাইনি। এ কলেজে প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।

এলাকার শিক্ষানুরাগীদের দাবী এসএসসি এবং দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র কলেজকে বাদ রেখে ওই এলাকার মাধ্যমিক স্কুল এবং মাদ্রাসায় নেয়ার ব্যবস্থা করলে কলেজের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন।

ঝিকরগাছা উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র এবং ভ্যেনু সংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এজন্য কোন কলেজ শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহনে অসুবিধা হয়ে না।

এ বিষয়ে এলাকার অবিভাবকগণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র স্হাপনের দাবি জানিয়েছেন।