খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, ধর্ম, যশোর | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4391 বার
দীনবন্ধু মজুমদার : আজ ২৫ সেপ্টেম্বর বাঙালি সনাতন ধর্মবিশ্বাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শ্রীশ্রী দুর্গাপূজার সূচণালগ্ন মহালয়া। সনাতন ধর্মবিশ্বাসীদের মতে এদিন পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষে মহালয়ার এ শুভক্ষণে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা দেবীর আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয়।
পুরাণমতে, আশ্বিনী অমাবশ্যার এ দিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে নানা ধর্মীয় মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ ২৫ সেপ্টেম্বর মহালায়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু। ২৪ সেপ্টেম্বর রাত তিনটা ২৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড থেকে অমাবস্যা তিথি শুরু হয়েছে এবং যা থাকবে ২৫ সেপ্টেম্বর রাত তিনটা ৫৪ মিনিট ১৭ সেকেন্ড পর্যন্ত।
বেনাপোল হরিদাস ঠাকুরের পাঠবাড়ি আশ্রম সূত্রে জানা গেছে, ১ অক্টোবর সকাল সাড়ে সাতটায় ষষ্টাদি কল্পারম্ভে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, ওই দিন বিকেল ৫টায় পূজারম্ভ। ২ অক্টোবর সকাল সাড়ে ছয়টায় মহাসপ্তমি, ৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টায় মহা অষ্টমী; কুমারীপূজা সকাল ১১টায়। বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটে সন্ধিপূজা শুরু হয়ে ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে সমাপন। ৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টায় মহানবমী পূজা কল্পারম্ভ; ৫ অক্টোবর দশমী কল্পারম্ভ সকাল সাড়ে ৬টায় এবং ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন।
এরই আলোকে এ বছর যশোর জেলার ৮ উপজেলায় গত বছরের চেয়ে ৬টি বেড়ে ৭০৮টি মন্দির ও মণ্ডপে পূজার আয়োজন চলছে পুরোদমে। মন্দিরে ও মণ্ডপে প্রতীমা তৈরির কাজে ব্যস্ত ভাস্করেরা। আয়োজকরাও বর্ণিল আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এখন শুধু অপেক্ষা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। ৬দিন পরেই চারিদিকে ধ্বণিত হবে ‘রূপং দেহি, যশ দেহি, জয়ং দেহি, দিশো দেহি।’
উল্লেখ্য, মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস । পুরাণ মতে, শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না । ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্ব বহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হতে চায়। সুর অসুরের দ্বন্দ্বে মহালয়ার এদিনে, দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। এবছর দেবীর আগমন গজে; যার অর্থ শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা এবং কৈলাসে ফিরে যাবেন নৌকায়; যার অর্থ চারিদিকে ভাল ফসল ও জল বৃদ্ধি।
শাস্ত্রমতে, মহালয়ার দুইটি পর্ব রয়েছে, একটি পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবী পক্ষ। দেবীপক্ষ তথা মহালয়ার এদিন মৃত আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনায় গঙ্গাতীরে প্রার্থনা করেন ভক্তরা। মহালয়ার আর একটি দিক হচ্ছে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন এটি।
ধর্মীয় বিশ্বাস মতে দেবীপক্ষের আগের কৃষ্ণা প্রতিপদে মর্ত্যধামে নেমে আসেন পিতৃপুরুষরা। অপেক্ষা করেন উত্তরসূরিদের কাছ থেকে তিল, তুলসী, জল পাওয়ার। মহালয়ার দিন অমাবস্যায় তাদের উদ্দেশ্যে তিল, তুলসী, জলদানই তর্পণ। তাই এই পূণ্যতিথিতে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন সনাতন ধর্মবিশ্বাসীরা।
এ দিন মহালয়ার শুভক্ষণে সনাতনধর্মীয় আচারানুষ্ঠান আর বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণে যশোরে তিল তর্পণ অনুষ্ঠানসহ নানা ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করা হবে। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শোক, তাপ, দুঃখ, অমঙ্গল, অন্ধকারহরণ করে শুভ, মঙ্গল, আনন্দপ্রদানকারী ও আলোর দিশারী অসুরবিনাশিনী মা’কে হিমালয় থেকে মর্ত্যে বরণ করে নেয়া হবে।
পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণে চিরায়ত প্রথায় শুভারম্ভ হবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের দেবী পক্ষের। এ উপলক্ষে সারা দেশের অন্যান্য জেলার মত যশোরেও সনতান ধর্ম সংঘ যশোরের আয়োজনে সকাল ৬টায় পৌর উদ্যানের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।