মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : জলস্তম্ভ হচ্ছে জল দিয়ে মোড়ানো বাতাসের তৈরি পিলার। টর্নেডোর ফলে এটি সৃষ্টি হয়। জলভাগের ওপর শক্তিশালী টর্নেডো সৃষ্টি হলে প্রবলবেগে ঘূর্ণায়মান বায়ুর টানে জলভাগের জল টর্নেডোর কেন্দ্র বরাবর স্তম্ভাকারে ঘুরন্ত অবস্থায় উপরে উঠে যায়। একে জলস্তম্ভ বলে।

শনিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের চাতলবিল এলাকায় এমন জলস্তম্ভের দেখা মেলে। হাকালুকিতে এমন দৃশ্য খুবই বিরল।

স্থানীয় বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন জসীম জানান, এমন দৃশ্য বেশ কয়েকবছর আগে হাকালুকিতে দেখা গিয়েছিল বলে শুনেছি। এরপর এমন ঘটনা আজই শুনলাম। জলস্তম্ভে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায়নি। বিকেলে ঘণ্টাখানেক থেকে পরে অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায় এটি।

স্থানীয়রা জানান, এই টর্নেডোতে হাকালুকির পানি জোয়ারের মতো ফুলে উঠেছিল। আকাশ কালচে বর্ণ ধারণ করে বিজলী চমকে গর্জন করতে থাকে। জল আর আকাশের মধ্যে তৈরি হওয়া জলস্তম্ভ হাকালুকির তীরবর্তী লোকজন কৌতূহল ভরে প্রত্যক্ষ করেন। ওই সময় হাওরে উপস্থিত অনেকে ছবি তুলে এবং ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেকটা ঘূর্ণি তুফানের মতো পানি শোষণ করে আকাশে তুলতে থাকে বাতাসে তৈরি হওয়া জলস্তম্ভ। জলের উপরিভাগে প্রবল বেগে ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়।

আবহাওয়াবিদরা জানান, জলভাগের পানি শোষণ করে উপরে তুলে সৃষ্ট টর্নেডো শক্তি সঞ্চার করতে পারেনি। যে কারণে সেটি ছেড়ে দেয়। নয়তো সেটি ধ্বংসাত্মক হতে পারতো। স্থলভাগের স্পর্শে এলে সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতো।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাইদ চৌধুরী ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “জলরাশিতে যেটা দেখা গেছে, সেটি মূলত টর্নেডো। এ ধরনের টর্নেডো অন্তত ১০/১২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়। সেটি হয়তো আরও বেশি বিস্তৃত হতে পারতো।”

তিনি আরও বলেন, “যিনি ভিডিও ধারণ করেছেন, তিনিও এটার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেনি, এর ঘূর্ণন গতি বিস্তৃত হতে থাকলে নৌকাসহ তাকেও উড়িয়ে নিতে পারতো। কয়েক বছর আগে নেত্রকোনা হাওরেও ১০/১২ কিলোমিটার জুড়ে এমন টর্নেডো সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সেবারও শক্তি সঞ্চার ঘটাতে না পারায় তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তেমনি হাকালুকি হাওরেও ঘূর্ণায়মান তীব্রগতিতে পানি উপরের দিকে উঠে গিয়েছিল। সেটি অন্য কোনো দিকে অগ্রসর হলে প্রলয়ঙ্করী হতে পারতো।”

তিনি জানান, সাইক্লোন সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সেমিনারে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন জাপানের কাইটো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রফেসর ড. শি থাইচি হায়াসি। তিনি এবং বাংলাদেশি আরেকজন বিশেষজ্ঞ সিলেট পৌঁছেছেন বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে। তারা রবিবার হাকালুকি হাওরে যাবেন।