খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম বিভাগ, জেলার খবর | তারিখঃ জুলাই ১৫, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2397 বার
উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারে আশ্রিত শত শত শরণার্থী রোহিঙ্গা নাগরিক। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সরব হওয়ায় মিয়ানমারে যেতে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা পালানোর পথ বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন শহরে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে চীন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কথা জানার পর তারা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে পালিয়ে যাচ্ছ।
এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭৮ সালে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই সৌদি, ওমান, কাতার, দুবাই ও বাহরাইনে রয়েছে। তাদের কাছে এখন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। তারা তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে নামে-বেনামে দেশের বিভিন্ন জেলাতে জমি কিনে আবাসস্থল গড়ে তুলেছে। এসব পুরনো রোহিঙ্গার মদদে নতুন রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
পালংখালীস্থ অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসাইন বলেন, ক্যাম্পে কর্মরত কিছু সেবাসংস্থার লোকজন প্রত্যাবাসনবিরোধী চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারাই মূলত রোহিঙ্গাদের উস্কে দিয়ে পালিয়ে যেতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রতিদিন থাইংখালী ও কুতুপালং ক্যাম্প থেকে প্রচুর রোহিঙ্গা নাগরিক পালাচ্ছে। মাঝেমধ্যে পুলিশ ও এপিবিএন তাদের ধরলেও আবার ক্যাম্প এলাকায় ছেড়ে দেওয়ার কারণে আরও সাহস পাচ্ছে।
কুতুপালং ক্যাম্প এলাকার রাজাপালং ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর কর্তৃক রোহিঙ্গাদের কাঁটাতারের বলয় গড়ে তোলা হলেও কার্যত সফলতা পায়নি। তারা কোনো না কোনোভাবে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ক্যাম্প ত্যাগ করছে। চলে যাচ্ছে কর্মস্থলে গন্তব্যস্থানে।
হেলাল উদ্দিন বলেন, এক শ্রেণির পেশাদার পাচারকারী চক্র অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়তা করছে।
কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এইচএম এরশাদ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চীনের সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চীনের অংশ নেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে কূটনৈতিক পর্যায়ে কাজ করছে সরকার। এই নিয়ে চীনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে বেশ কয়েকদফা সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। এ খবর প্রত্যাবাসনবিরোধী চক্র ও দেশে ফিরতে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে রোহিঙ্গারা পালানোর পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র বলেন, সরকারের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করছে। তারা উখিয়া থেকে মহাসড়ক ও গ্রামের রাস্তা দিয়ে চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গত মাসেই রোহিঙ্গারারা কয়েকটি পৃথকদলে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ছয় শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পে অপরাধ নির্মূলে দায়িত্বরত এপিবিএন পুলিশ সুপার সিহাব কায়সার বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বেআইনি সমাবেশ করে অপরাধ সংঘটিত করতে দ্বিধা করে না। ক্যাম্পের অভ্যান্তরে একটা না একটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লেগেই থাকে। এসবের সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে এপিবিএন ব্যাটালিয়নকে। রোহিঙ্গাদের আটক করা হলেও আশ্রয় ক্যাম্পে ছেড়ে দেওয়ার কারণে দুঃসাহস বেড়ে গেছে।
সিহাব কায়সার বলেন, এক বছরেই বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে এপিবিএন কর্তৃক অস্ত্র-গোলাবারুদসহ দেড় হাজার রোহিঙ্গা অপরাধীকে আটক করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদের স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী এম আয়াজ রবি বলেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বিভিন্ন সেবাসংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা অপরাধীদের জন্য কর্মমুখী কারাগার স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে তারা অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে অনায়াসে। ফলে বৃহত্তর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
আয়াজ রবি বলেন, রোহিঙ্গা অপরাধীদের আটকে রাখার পাশাপাশি কর্মমুখী কারাগার নির্মাণের দাবি উঠেছে সর্বমহলে। এমন কারাগারে শুধু রোহিঙ্গা অপরাধী বন্দি শিবিরে ভরণপোষণসহ বিভিন্ন কাজ শেখার সুযোগ পাবে।