জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ জুন ২৫, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1819 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপিসহ যারা পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধের চেষ্টা ও বিরোধিতা করেছিল, তীর্যক মন্তব্য ও ব্যঙ্গ করেছিল তাদের সবাইকে এই সেতু দেখে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, দেশের জনগণ সাপোর্ট আর শক্তি দিয়েছিলো বলেই আজ আমরা পদ্মা সেতু বানাতে পেরেছি।
শনিবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ীতে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে দিন রাত কাজ করেছি। তার জন্য অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। অনেক চড়াই উৎরাই পার করে আমরা আজ এখানে এসেছি। সবার খাদ্য নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। প্রতিটি এলাকায় স্কুল করে দিয়েছি। কলেজ করে দিয়ে শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছি। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। প্রত্যেকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। বাংলাদেশের উন্নয়নধারা আমরা অব্যাহত রেখেছি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ২০০১ সালে আমারা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। খালেদা জিয়া এসে তা ব্ন্ধ করে দেয়। পরে ২০০৯ সালে এসে আমরা পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করি। তখন বিএনপি বলেছিলো, আওয়ামী লীগ কখনো পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারবে না। এখন তাদের বলেছি, আসুন দেখে যান আমরা করতে পেরেছি কিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদশের জনগণের সাপোর্ট আর শক্তি দিয়েছিলে বলেই আজ আমরা পদ্মা সেতু বানাতে পেরেছি।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে ড. ইউনূস যড়যন্ত্র করেন ও বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বানোয়াট অভিযোগ করেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে পদ্মা সেতুর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত, সেটা নিয়ে কেন দুর্নীতি হবে। তারপর আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, নিজেদের টাকায় সেতু করব।
প্রধানমন্ত্রী এসময় তার শরীয়তপুর সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, যখন শরীয়তপুর এসেছিলাম, লঞ্চে করে এসেছি। কাঁদা-পানি মাড়িয়ে মিটিং করেছি। আজ সে শরীয়তপুরের চেহারা বদলে গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করেছে। আগে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যেতে ২২ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন আমরা পায়রা পর্যন্ত রাস্তা-ঘাট, সেতু বানিয়ে দিয়েছি, একমাত্র দক্ষিণঞ্চলের মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে আর উত্তাল পদ্মা পারি দিতে গিয়ে কাউকে স্বজন হারাতে হবে না। যারা বাধা দিয়েছিলো তাদেরও একটা উপযুক্ত জবাব আমরা দিয়েছি এই সেতু বানানোর মাধ্যমে। জাতির পিতা বলেছেন, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ আসলেই পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার আহবানে সাড়া দিয়েইতো এদেশের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। আজ আমরা একটি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করতে পেরেছি।
বক্তব্যে দেশের মানুষকে করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য বুস্টার ডোজ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, আমি আপনাদের কাছে আবেদন করব, সারাদেশে আমরা টিকা দিয়েছি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। এখন বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে, আপনারা সবাই বুস্টার ডোজ নেন।
বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব মানুষকে আমরা ঘর তৈরি করে দেব এবং দিচ্ছি। সেতু করতে গিয়ে যারা জমি দিয়েছেন তাদের সবাইকে জমি দিয়েছি, ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়েছি, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
এদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা-মা পরিবার জীবনটা দিয়ে গেছেন। আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা বেঁচে আছি। এই সেতু করতে গিয়ে আমাদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, কিন্তু ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে আমরা বলেছি এই সেতু করব। এবং আমরা করেছি। এই শক্তি দিয়েছেন আপনারা, এই সাহস দিয়েছেন আপনারা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাই আপনাদের বলবো আমাদের দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও যেন পতিত পড়ে না থাকে। যে যাই পারে উৎপাদন করবেন, নিজে খাবেন, অপরকে দেবেন, বাজারে পাঠাবেন।
আমি বাবা-মা-ভাই হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি পেয়েছি বাবা-মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের ভালোবাসা। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে নিজের জীবনও দিতে পারি। নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি, আমার আপনাদের দেওয়ার কিছু নেই। আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।
এর আগে মাওয়া প্রান্তে টোল দিয়ে বেলা ১২টায় প্রমত্তা পদ্মার বুকে সেতুর ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা। পরে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে জাজিরা প্রান্তে রওনা দেন তিনি। মাঝে সেতুর ওপরে থামে তার গাড়িবহর। সেখানে বিমান বাহিনীর ফ্লাইং ডিসপ্লে উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও বহরের সঙ্গীরা।
বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজা সংলগ্ন উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন তিনি। পরে তিনি মোনাজাতে অংশ নেন।