নিজস্ব প্রতিবেদক : সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেছেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্ব আরও অনেক বেশি আছে।

মঙ্গলবার ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি একথা বলেন।

এদিন মোট ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এতে সাড়া দেয়নি বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল।

অন্য চারটি দল হলো—বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।

ইসির ডাকে সাড়া দিয়ে আটটি দলের প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দেন। দলগুলো হলো—ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বক্তব্যে ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, রিসেন্টলি যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, আমরা কিন্তু কোনো সেন্টার থেকে কোনো এলিগেশন পাইনি যে, এটার (ইভিএম) অপব্যবহার হয়েছে। আপনারা টিভিতে দেখেছেন যে, দুয়েকজনের হাত মিলছিল না। সে বাসায় গিয়ে ধুয়ে আসার পরে আবার যখন আঙুলের ছাপ দিলো, তখন কিন্তু আইডেন্টিফাই হয়েছে। যন্ত্রের কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে। ব্যালটে যেমন একজনের জায়গায় ১০০টা (ভোট) দেওয়া হতে পারে, এখানে একটা জিনিস হাত না মিলতে পারে। কিন্তু আমার ভোট আপনি, আর আপনার ভোট আমি এটা একেবারেই অসম্ভব।

ইভিএম ও ব্যালটের প্রসঙ্গে টেনে সিইসি বলেন, ব্যালটে আমার নিজেরও অভিজ্ঞতা আছে কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করে এক ঘণ্টায় দুই-তিনশ সিল মেরে ভরাট করেছে। আপনারা পাশে থেকেও তো ওটা বন্ধ করতে পারেন নাই। সেই দিক থেকে ইভিএমে যদি কোনো দোষত্রুটি থেকে থাকে, আমি ইভিএম বিশেষজ্ঞ না, তারপরেও আমি এ পর্যন্ত যতটুকু ইভিএম দেখেছি ইতিবাচক দিকগুলো অনেক বেশি।

সিইসি বলেন, ইভিএমের ওপর যেহেতু আপনাদের পুরোপুরি আস্থা আসছে না। আমরা আজকের আলোচনাটা আয়োজন করেছিলাম ব্যাপক কনসাল্টেশনের জন্য। আজকে ১৩টি দলকে ডেকেছি, এরআগে ১৩টি দলকে ডেকেছিলাম। ১৩টি দল বোধ হয় আসেনি, ৯-১০টি এসেছিল। আমরা জানি ইভিএম নিয়ে আপনাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। আমরা কিন্তু আপনাদের মতামত শুনছি। আপনাদের মতামতকে মূল্য দিচ্ছি। এরপর আরও ১৩টি দল আসবে। উনাদের সাথেও আমরা এভাবে মতবিনিময় করব। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা সবদলের মতামত না দিয়ে সিদ্ধান্ত নেব না। এই জন্য আমরা এই প্রক্রিয়াটা গ্রহণ করেছি। আমরা আপনাদের মতামত বিশ্লেষণ করব সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে নিবন্ধিত ৩৯টি দল আছে। তাদের প্রত্যেককে আমরা আমন্ত্রণ করেছি। আমরা আমাদের দিক থেকে শতভাগ সততার সাথে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব। আমরা যারা কমিশনে আছি- তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কোনো কাজ করবে না, সরকারও চাইবে না আমরা আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি। সবার সর্বাত্মক চেষ্টা লাগবে।

‘আপনারা যদি ভোটকেন্দ্রে এসে লক্ষ্য করেন যে, আমরা ইভিএমে কোনো ম্যানুপুলেশন করছি কিনা, জাল ভোট হচ্ছে কিনা বা ব্যালটেও তো ভোট হবে। সেখানেও ভোটাররা সঠিকভাবে তাদের ভোট দিতে পারছে কিনা। সেই চেষ্টাগুলো সার্বিকভাবে আপনাদেরকেও করতে হবে’—যোগ করেন তিনি।

আমরা এই চারজন পাঁচজন লোক উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমাদের উপর যদি আপনারা ডিপেন্ড করেন, তাহলে কিন্তু ইলেকশনটা সুন্দর হবে না। আপনাদের দায়িত্ব আরও অনেক বেশি। আপনারা ফিল্ডে থাকেন, আমি কয়টা সেন্টারে যাবো সিইসি হয়ে? আমরা পুলিশকে ডেপ্লয় করার চেষ্টা করবো, বিজিবি ডেপ্লয় করার চেষ্টা করব। এই কাজ গুলো করার চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ আস্থায় বিশ্বাস করি না। শতভাগ আস্থা কখনো হয় না। আপনি হারবে বলবেন উনি চোরামি করেছেন। আর উনি বলবেন আমি খুব সৎ। কারণ এই দ্বন্দ্ব থেকে যাবেই। একশ পারসেন্ট আমি সৎ থাকব।

আমার চারপাশে যারা আছে- যাদের ওপর আমার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই, আপনারা রাজনৈতিক দল, সরকার, সরকারি দল তারাসহ সবাই কি আপনারা হান্ড্রেড পারসেন্ট সৎ থাকবেন? প্রশ্ন রাখেন সিইসি।

এদিনের বৈঠকে ১৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর আগে ১৮ জুনের বৈঠকে ১৩টি দলের মধ্যে ১০টি অংশ নিয়েছিল। আগামী ২৮ জুন আওয়ামী লীগসহ আরও ১৩টি দলকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।