এস এম মহিদার রহমান, সাতক্ষীরা ঃ সাতক্ষীরার কলারায়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার অস্ত্র আইনের মামলায় চার্জ গঠন হয়েছে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং স্পেশাল ট্রাইবুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মন্ডলের আদালত ৪৯ জন আসামীর মধ্য তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪০ জন আসামীর উপস্থিতিতে এ চার্জ গঠন করা হয়। আগামী ২৯ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে বলে রাস্ট্রপক্ষ জানিয়েছে।
ঘটনার বিররণ জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চদনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোর ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপর আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলাা অভিযাগ ওঠে তৎকালীন এমপি হাবিবসহ বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন, জোবায়দুল হক রাসেল, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথী, শহিদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টম্বর কলারোয়া মুক্তিযাদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামী করে আদালতে দায়ের করেন। মামলায় ১৮জনকে সাক্ষী করা হয়। বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই মহামান্য হাইকার্ট নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে নির্দেশ দেন। মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চদ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টাবর অভিযাগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ১৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযাগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয় এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মামলাটি ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযাগপত্রে উল্লেখিত ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। এরমধ্যে আসামী মাহাফুজুর রহমান সাবু কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ২৪ এপ্রিল বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব মহামান্য হাইকার্ট থেকে জামিন পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার আগেই ২৫ মে সুপ্রিম কোর্টের চম্বরে জর্জ জামিনাদেশ স্থগিত করে দেন।
সাতক্ষীরা আদালতের সরকারি কৌশলী এ্যাড.আব্দুল লতিফ জানান, অস্ত্র আইনের ১৯এর ক্যাপিটাল-এ, ১৯-এর এফ ও ২৩ ধারায় মামলাটির চার্জ গঠন করা হয়েছে। আমরা আদালতে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছি,শেখ হাসিনার গাড়ীবহরে হামলার সময় বোমা বিস্ফারণ করা হয়েছিল । অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। আজকে অস্ত্র আইনে চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিস্ফারক আইনের মামলায় দুজন সাক্ষী হাজিরা দিয়েছিলেন। দুইটা মামলা একই সাথে চলবে। আগামী ২৯ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে বলে জানান সরকারি এই কৌশলী।
এ্যাড. আব্দুল লতিফ আরও জানান, পুলিশর দেওয়া অভিযাগপত্রে থাকা ৫০ জনের মধ্য ১জন মারা গেছেন। ৯ জন আসামী পলাতক রয়েছেন। বাকী ৪০ জন আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।