নুরতাজ আলমঃ দেশের সর্ববৃহৎ আম বাজার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আম বাজার । আম মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন জাতের আম নিয়ে এসে এই বাজারে বিক্রয়ে করেন আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা । এই আমবাজার থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হয় আম । কিন্তু চলতি ২০২২ সালের আম মৌসুমের শুরুতেই আম বাজার মালিক পক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা । বিশেষ করে চালানের অযোগ্য ছোট আকার ও অল্প মিষ্টি আমগুলো বিভিন্ন জুস কোম্পানিতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে । এক্ষেত্রে এসব আম ক্রয় ও বিক্রয়ে র জন্য কানসাট আম বাজারে অন্তত ২০টি আড়ত রয়েছে যারা জুস আড়ত সমবায় সমিতির অধীন । কিন্তু চলতি বছর এই জুস আড়ত সমূহের উপর অন্যাযভাবে কয়েক দফায় টোল চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আড়ত মালিক, ব্যবসায়ী ও চাষীরা । কানসাট জুস আড়ত সমবায় সমিতির সভাপতি মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এলাকার ও বাজারের ছোট, অল্পমিষ্টি ও নষ্ট আমগুলো কিনে বিভিন্ন জুস কোম্পানিতে বিক্রি করে থাকি । আমাদের এই আমগুলো তুলনামূলক অনেক কম দামে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে । অথচ কানসাট আমবাজার মালিক পক্ষ আমাদের উপর অতিরিক্ত টোল চাপিয়ে দিচ্ছে । বেশি দামী ও চালানের উপযোগী ভালো আমে যেখানে টোল দিতে হয় একবার, আমাদের কমদামী জুসের আমের উপর টোল দিতে হয় দুই বার । যার ফলে আমচাষী, ব্যবসায়ীও আড় তদাররা চরম হয় রানির শিকার হচ্ছে । লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসানের আশংকা করছি আমরা । জুস আড়ত সমবায় সমিতির প্রচার সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, সাধারণত আম ব্যবসায়ীরা আমবাজারে আম বিক্রি করলে তার খাজনা পরিশোধ করবে এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু একবার খাজনা আদায়র পর সেই আমটাই যখন আমরা গাড়িতে লোড করে বাইরে পাঠাচ্ছি তখন আবার গাড়ি আটকিয়ে ক্যারেট প্রতি ৬ টাকা করে আদায় করছে । এসময় চালানের আমের উপর একবার অথচ জুসের আমের উপর দুইবার খাজনা আদায়ের এই অসামঞ্জস্যতাকে চরম হয়রানি বলে উল্লেখ করে জুস আড়তদাররা বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে লোকসানের মুখে ফেলার জন্য এভাবে জিম্মি করা হচ্ছে ।

এদিকে বাজার মালিকদের অযাচিত টোল আদায়ের অভিযোগ তুলে ক্যারেট ব্যবসায়ী মিলন আহমেদ বলেন, আমাদের দোকান থেকে সাধারণ মানুষ খালি ক্যারেট কিনে নিয়ে গেলে রাস্তায় আটকিয়ে তাদের কাছেও ক্যারেট প্রতি ৬ টাকা টোল আদায় করা হয় । এটা সম্পূর্ণ অন্যায় । খালি ক্যারেটে অহেতুক টোল আদায়ের ফলে মানুষ বাজার থেকে ক্যারেট কিনতে ভয় পাচ্ছে এবং বাইরে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যারেট ক্রয় করছে । যার ফলে আমাদের লক্ষ লক্ষ টাকার এই ক্যারেট ব্যবসাও চরম হুমকির মুখে । ক্যারেট ব্যবসায়ী মেসার্স ফোর স্টার ট্রেডার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার নিজের আড়ত থেকে খালি ক্যারেট বের করে নিয়ে গেলেও গাড়ি আটকিয়ে প্রতি খালি ক্যারেটে ৬ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে । এটা সম্পূর্ণ অন্যায় । কানসাট বাজারে ক্যারেট ক্রয় করতে আসা আনারুল ইসলাম বলেন, আমি খাসেরহাট থেকে কানসাট বাজারে ক্যারেট কিনতে এসেছি, এই ক্যারেট নিয়ে যেয়ে যেখানে আম নিয়ে বিক্রি করব সেখানে টোল দিব, কিন্তু তার আগেই ক্যারেট কেনার সময়ই আমার কাছে অগ্রিম ক্যারেট প্রতি ৬ টাকা করে আদায় করে নিলো ।

অপরদিকে অসম্ভব টোল আদায়ের ফলে জুসের আম ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ থাকায় দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন আমচাষীরা । জানতে চাইলে আমচাষী ও বিক্রেতা মো: সাদ্দাম হোসেন চরম হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, গাছে আম পেকে যাওয়া সকাল ৭ টায় বাজারে আম নিয়ে এসেছি । এখন দুপুর সাড়ে ১২ টা বাজলেও কোন ক্রেতা আম কিনছে না । এতগুলো আম এখন ফেলে দেয়া ছাড়া উপায় নেই । আবার ৩-৪ মণ চালানের ভালো আম নিয়ে আসলে আড়তদাররা বেছে বেছে নেয়ার পরে কিছু আম থেকে যায়, যেগুলো আমরা জুস আড়তে বিক্রি করতে পারি । কিন্তু সেটার উপরে অতিরিক্ত টোল চাপার কারনে আর কিনছে না কেউ । এক্ষেত্রে আমরা চরম লোকসানের মুখে পড়ছি ।
অযাচিতভাবে জুসের আম ও খালি ক্যারেটের উপর টোল আদায় বন্ধ করা না হলে আমচাষী, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে উল্লেখ করে আড়তদার ও ক্যারেট ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধের জোর দাবী জানান । তবে সাধারণ নিয়মানুযায়ী চালানের আমের উপর যে টোল নির্ধারিত রয়েছে সেই টোল পরিশোধে কোন আপত্তি নেই বলেও জানান তারা ।
প্রাণ কোম্পানির আম সরবরাহকারী ইমাম হোসাইন ও:আমিনুল ইসলাম মিলন জানান, জুস আমের মতো নিম্ন মানের আমের উপর অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ফলে আমরা আম কিনতে পারছি না । কেনার সময় প্রতি মণ আমে ২৪ টাকা, আবার একই আম গাড়ি লোড করার সময় আবারো প্রতি মণে ২৪ টাকা খাজনা প্রদান এটা আমাদের কাছে অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে ।
আকিজ কোম্পানির আম সরবরাহকারী মাসুদ মাষ্টার ও একই অভিযোগ করেন ।

এদিকে কানসাট আম বাজারের ইজারাদার আসাদুজ্জামান ভোদন বলেন, জুস ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন । আমরা সরকারের দেয়া সিডিউল অনুযায়ীই টোল আদায় করছি । সেই সাথে ক্যারেটের উপর টোল আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি কানসাট বাজার থেকে টোল দিয়ে ক্যারেট কিনে নিয়ে যদি সেই ক্যারেটে কানসাট বাজারে আম বিক্রি না করে, তাহলে আমরা তার টোল ফেরত দিব । এসময় কানসাট বাজারে আরো বিভিন্ন পন্য বিক্রয়ে সিডিউলের চাইতেও কম পরিমাণে টোল আদায় করা হয় বলেও দাবী করেন হাট ইজারাদার আসাদুজ্জামান ভোদন ।