সানজিদা আক্তার সান্তনা, যশোর অফিস : যশোর জেলা জুড়ে বৃষ্টিতে ধান নষ্ট ও শ্রমিক সংকট নিয়ে কৃষকরা চরম হতাশায় ভুগছে। গাছে থাকা ও কাটা ধানে পচন ধরায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে ।

অনেক কষ্টে শ্রমিক পাওয়া গেলেও মুজুরী বেশি হওয়ায় অনেকে ধান জমি থেকে ঊঠাতে পাছে না। এদিকে শ্রমিকরা সুযোগ বুঝে বেশি মুজুরী চাওয়ায কৃষকের গলার কাটা হয়ে বিধছে বোরো ধান। প্রায় এক মণ ধানের দাম এক শ্রমিকের এক বেলার দাম, ফলে থমকে আছে ঘরে ধান উঠানোর কাজ।

মঙ্গলবার দিনভর যশোরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা বাবদ ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকাচ্ছেন শ্রমিকরা। এতেই দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। এ দিকে কামলা হিসাবে দিনচুক্তিতে একজন শ্রমিক দাম হাকাচ্ছেন মজুরি ৮শত থেকে ১ হাজার পাকা টাকা।

শার্শার দক্ষিন বুরুজ বাগান গ্রামের কৃষক মোলাম হোসেন জানান, তার মাঠে ধান কাটা আছে সাড়ে ৪ বিঘা। যা ঈদের দিন হতে বারবার ভিজছে। কোন প্রকার শুকালেও শ্রমিক বিচালি বাধলেও রোববারের সকালের হঠাৎ বৃষ্টিতে সব ধান পানির নিচে। যা শুকাতে কম পক্ষে ১০ দিন সময় লাগবে। এতে ধান সহ বিচালি পচে যাবে। যাতে নিজ খাদ্য সংকট সহ গো-খাদ্যের চরম সংকট সৃষ্টি হবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কুন্দিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ জানান, তিনি ১০ বিঘা জমির ধান কেটে প্রতিদিন মেঘ-বৃষ্টির সাথে লুকোচুরি খেলছেন। তিনি গত আমন চাষে বৃষ্টির কারনে ৮ বিঘা জমির ধান তুলতে পারেননি। মাঠেই পচে গেছে তার ধান। এবার ধান তুলতে না পারলে তাকে দেওলিয়া হতে হবে। মহাজনের টাকা শোধ করতে না পারলে জমি বিক্রি করে পথে বসতে হবে।

এদিকে মনিরামপুরের নির্মান শ্রমিক আব্দুল গনি জানান, জমিতে ধান পরিপক্ক হয়ে গেলেও শ্রমিকের সংকটের সাথে মজুরি বেশি। কারণ হিসেবে জানা যায়, ধানকাটা এবং লাগানোর কাজ হয় শুধু মৌসুম এলেই। কিন্তু বর্তমানে জীবনযাত্রার মানের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে শ্রমিকেরা ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ অটোচালক হয়েছেন, কেউ পোশাক শ্রমিক, কেউ বা মাসিক চুক্তিতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। ফলে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তাই মৌসুম আসলে এমন সংকটে পড়তে হয়। বেশিরভাগ শ্রমিকই শহরমুখি হয়ে পড়েছেন। তাদের দাবি সারা বছর শহরে কোনা না কোনো কাজ হয়। বছরে ২ সিজনে মাঝে ধান কাটার জন্য ১০-১৫ দিন কাজ করলে শহরের কাজ হাত ছাড়া হয়ে যাবে। তাই কৃষি কাজে ফিরতে চাচ্ছেনা তারা।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এখনো পর্যন্ত পাকা ধানের ২৫ শতাংশ কাটা হয়েছে। প্রতি বিঘায় প্রায় ১ মেট্রিক টন করে ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই ডিজেল ও বিদ্যুৎের দাম বাড়ায় সেচ কাজে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার সব প্রকার সার কীটনাশকের দামও বেড়েছে কয়েক দফায়। এমন পরিস্থিতিতে ধান চাষে খরচ হচ্ছে আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এরই মধ্যে ধানে ব্লাস্ট রোগ ও কারেন্ট পোকার প্রকপে উৎপাদন অনেক এলাকায় কমে গেছে।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে ধানের মণ ৮২০ – ১২৫০ টাকা। যা একজন কৃষি শ্রমিকের প্রায় একদিনের মজুরির সমান । এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান কাটতে প্রয়োজন ৮ জন শ্রমিক। তার পরেও যদি শ্রমিক পাওয়া যেত, তাহলেও স্বস্তি পাওয়া যেত।

শার্শার দক্ষিন বুরুজ বাগান গ্রামের বর্গাচাষী শের আলী এবার প্রায় ৮ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। তার প্রায় সব জমির ধানই পাকা শেষ। বাজারে কয়েকবার গিয়েও তিনি পাচ্ছেন না শ্রমিক। তিনি আরো বলেন, এভাবে বৃষ্টি হলে বিচালী তৈরি করতে পারবেননা যা তাদের লোকসানের কারন হতে পারে।

এবিষয়ে শার্শা উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তার বারাত দিয়ে উপসহকারি কৃষি শ্রী অমল বলেন, উপজেলায় শিল্পায়নের প্রসারে এবং সিজন ছাড়া কাজ কম থাকায় শ্রমজীবী মানুষ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। ফলে কৃষিতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।