খুলনা জেলা প্রতিনিধি : খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় পিয়ারুন্নেছা নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল হাসানের সঙ্গে ওই নারীর ছেলের মোস্তাকিমের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরদেহ আটকে তার অপর ২ ছেলে তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশে দেন। ১৩ ঘণ্টা পর তারা মুক্তি পেয়েছেন।

নগরীর দৌলতপুর থানার পাবলা কারিকরপাড়া এলাকার মাওলানা আবদুর রাজ্জাক জানান, বুকেব্যাথা ও পায়খানা-প্রসাব না হওয়ায় তার স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা (৫৫) খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার রাতে তার অবস্থা গুরুতর হলে তার ছেলে মোস্তাকিম ডাক্তারকে ডাকতে যায়। কিন্তু ডাক্তার আসেননি।

এ অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তখন তার ছেলে মোস্তাকিম গিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান কেন তারা আসেননি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল হাসানের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয় বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, জানতে পেরে তিনি ওই চিকিৎসকের কাছে ক্ষমা চান। তখন একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তার গায়ে আঘাত করেন। এরপর তার অন্য দুই ছেলে তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন তারা। এছাড়া তার স্ত্রীর মরদেহ হস্তান্তর না করে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আটকে রাখে।

ওই রোগীর স্বজনরা জানান, বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরদেহ হস্তান্তর করতে চান। তখন স্বজনরা মরদেহ গ্রহণ করেননি। তারা পিয়ারুন্নেছার মরদেহের সঙ্গে ওই ২ ছেলেরও মুক্তি চান।

বিক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী ও ওই নারীর স্বজনরা রবিবার বেলা ৩টার দিকে নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। ১০/১৫ মিনিট পর তারা পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয়। পরে বিকাল ৪টার দিকে পিয়ারুন্নেছার ২ ছেলেকে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর তারা মরদেহ নিয়ে বাড়িতে যান।

তবে রোগীকে না দেখতে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সৈকত ঘোষ। তিনি দাবি করেন, ওই রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় ১০-১৫ মিনিট পরপর সেখানে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগী দেখেছেন। কিন্তু তারপরও ওই রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের মারধর ও ভাঙচুর করেছে। এ কারণে সেখানে থাকা পুলিশ ওই রোগীর দুই ছেলেকে তাদের হেফাজতে নেয়। এখানে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কোনো হাত নেই।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, লাশ আটকানো হয়নি, লাশ মর্গে ছিল। ওই নারীর দুই ছেলেকে পুলিশ না ছাড়া পর্যন্ত তারা লাশ নেয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারি সম্পদ ভাঙচুরের অভিযোগে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন।

পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আপত্তি না থাকায় ওই নারীর ২ ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক।