খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর, শিক্ষাঙ্গন | তারিখঃ অক্টোবর ১৮, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2756 বার
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম : যশোর শিক্ষাবোর্ডে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কর্মচারি ও ঠিকাদারসহ ১১ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে দুদক। যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে চার্জসিট দাখিল করা হয়েছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৩৮টি চেক জালিয়াতি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক যশোরের উপ-পরিচালক আল আমিন।
চার্জশিটে বোর্ডের বরখাস্তকৃত হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম ও ও ঠিকাদার শরিফুল ইসলামসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন, উপ-শহর জামরুলতলা রোড এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল আলম, পোস্ট অফিসপাড়ার গাজী নূর ইসলাম, বড়বাজার জামে মসজিদ লেনের প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের প্রোপ্রাইটর রুপালী খাতুন, উপ-শহর ই-ব্লকের সহিদুল ইসলাম, রকিব মোস্তফা, শিক্ষা বোর্ডের সহকারী মূল্যায়ন অফিসার আবুল কালাম আজাদ, নিম্নমান সহকারী জুলফিকার আলী, চেক ডেসপাসকারী মিজানুর রহমান ও কবির হোসেন।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বোর্ডের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজের আয়কর ও ভ্যাট প্রদান সংক্রান্ত চেক, টিএ/ডিএ চেক, সাধারণ ঠিকাদারি কাজের বিলের পেমেন্ট চেকসহ মোট ৩৮টি চেক জালিয়াতি করে ৬ কোটি সাড়ে ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। বৃহস্পতিবার বিকালে যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, বোর্ডের প্রায় ২৫টি হিসাব সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের যশোর বিআইএসই শাখায় পরিচালিত হয়। তার মধ্যে একটি হিসাবের সিগনেটরি বোর্ডের সচিব ও চেয়ারম্যান। ২০১৭-১৮ অর্থবছর হতে ২০২১-২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত ওই হিসাব থেকে ৩৮টি চেক জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিয়ে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৬ টাকার স্থলে সর্বমোট ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯৭ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ৩৮ চেকের মধ্যে টিএ/ডিএ বিল বাবদ আসামি মো. আব্দুস সালামের নামে ইস্যুকৃত চেক ৩টি, সাধারণ বিল বাবদ সহকারী সচিব আশরাফুল ইসলামের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, মিম প্রিন্টিং প্রেস এর নামে ইস্যুকৃত চেক ৩টি, মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেস এর নামে ইস্যুকৃত চেক ২টি, নিহার প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, সবুজ প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, শরিফ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, সানিয়া ইলেক্ট্রনিঙের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, নূর এন্টারপ্রাইজ এর নামে ইস্যুকৃত চেক ৮টি, প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেস নামে ইস্যুকৃত চেক ৩টি, শাহী লাল স্টোর নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, দেশ প্রিন্টার্স নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, সেকশন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, অর্পানেট এর নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, আয়কর কর্তন বাবদ ইস্যুকৃত চেক ৪টি ও ভ্যাট কর্তন বাবদ ইস্যুকৃত চেক ৬টি। এর মধ্যে ১৬ টি চেক আসামি মো. আব্দুস সালাম নিজে রিসিভ করেন। অবশিষ্ট ২২টি চেক আসামি শেখ শরিফুল ইসলাম ডেসপাস রাইডার মো. জুলফিকার আলী, মো. মিজানুর রহমান ও মো. কবির হোসেনের সহায়তায় নিজে গ্রহণ করেন। এরপর ওইসব চেকরে টাকার পরিমাণ ঘষামাজার মাধ্যমে অবমোচন করে পরিমাণ বাড়িয়ে লিখে প্রিন্ট করে উত্তোলন করে। যার মাধ্যমে আসামিগণ পারস্পরিক সহায়তায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মূল টাকার অতিরিক্ত ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩ টাকা আত্মসাৎ করে। এজন্য দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
চার্জশিটে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তকালে চেক সিগনেটরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল আলীম, অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন কর্মরত ছিলেন। উক্ত সময়ে ড. মোল্লা আমীর হোসেনসহ তিনজন সচিব কর্মরত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ড. মোল্লা আমীর হোসেন ও সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজা ও প্রফেসর মো. তবিবার রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার দায় থেকে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।