খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ জুলাই ১৬, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2697 বার
আব্দুল্লাহ আল-মামুন : বেনাপোল স্থলবন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত ১৮ কোটি টাকা মূল্যের সালফিউরিক এসিড আটক হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কেমিকেল পরীক্ষক তপন কুমার দেবনাথ স্বাক্ষরিত একটি পত্রের আলোকে সালফিউরিক এসিড শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
জানা যায়, গত ০২ জুলাই-২০২৪ তারিখে মিথ্যা ঘোষণায় ভারত থেকে আমদানিকৃত ১৬৪২৫ কেজি ফরমিক এসিড নামে সালফিউরিক এসিড মিথ্যা ঘোষণায় বেনাপোল স্থলবন্দরের ৩৮ নাম্বার শেডে সংরক্ষণ করেন আমদানিকারকের বেনাপোল প্রতিনিধি “সিএন্ডএফ এজেন্ট” মোশারফ ট্রেডিং।
বিষয়টি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরে বেনাপোলে দায়িত্বরত জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সদস্যরা কাস্টম কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। পরে, কাস্টম হাউসের নিজস্ব ল্যাবে ফরমিক এসিড টেস্ট করে তা সালফিউরিক এসিড সনাক্ত হয় এবং পণ্য চালানটি জব্দ করেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা। পন্য চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্রগ্রামের রিফ লেদার লিমিটেড।
কাস্টম সুত্রে জানা যায়, সালফিউরিক এসিড আমদানির ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। এখানে, আমদানি কারক অনুমোদন বিহীন মিথ্যা ঘোষণায় উক্ত সালফিউরিক এসিড আমদানি করেছেন। একইসাথে আমদানিকারক সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করেছেন। এরপূর্বেও রিফ লেদার লিমিটেড’ মিথ্যা ঘোষণায় একইধারায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আরো কতোটি পণ্যচালান নিয়েগেছে তা খতিয়ে দেখলে পাওয়া যাবে।
বেনাপোলের অভিযুক্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট মোশারফ ট্রেডিংয়ের প্রোপ্রাইটর মোশারফ হোসেন জানান, তিনি পণ্য চালানটি ছাড়করানোর জন্য দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির অভিযোগে কাস্টমস কর্মকর্তারা কেমিকেল চালানটি প্রাথমিক পরীক্ষা করে সালফিউরিক এসিড পেয়েছেন বলে জানিয়েছে। বিষয়টি তিনি আমদানিকারককে জানিয়েছেন। তবে আমদানিকারক কাস্টমসের এ অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন এবং পুনরায় পরীক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা তদারকি ও করনীয় বিষয়ে দেখছেন বলে জানান তিনি।
বিষয়টি জানতে গত দু’দিন ধরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেনকে একাধিকবার ফোন এবং ম্যাসেজ দিয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কোন অনিয়মের বিষয়ে তথ্য প্রদানে বরাবরই বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের তথ্য দিতে অনিহা প্রকাশ করে থাকে। যেকারণে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য না পাওয়ায় সংবাদ লেখনীতে দূর্ভোগ পোহাতে হয় সাংবাদিকদের।
বেনাপোল স্থলবন্দরের বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত সকল পণ্যের দেখভাল করে কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর শূন্যরেখায় বিজিবি সদস্যরা আমদানি পণ্যের সাথে চোরাচালান প্রতিরোধে তদারকি করে। তবে সম্প্রতি সময়ে শুল্ককর ফাঁকি রোধে তদারকি শুরু করেছে সরকারি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থ্যা এনএসআই। অজ্ঞাত কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যে সব অনিয়ম শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে সেখানে বড় ধরণের ভূমিকা রেখে কাস্টমসকে সহযোগিতা করছে এনএসআই। সম্প্রতি সংস্থাটি বন্দরের আমদানি পণ্য প্রবেশ দ্বারে বিজিবি, বন্দর ও কাস্টমসের পাশাপাশি স্থাপন করেছে সিসি ক্যামেরা।
এদিকে সাধারণ সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে পরিমান পণ্য আমদানি হয় তাতে ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আসার কথা। সেখানে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে কাস্টমসের এক শ্রেণির কর্মকর্তারা শুল্ককর ফাঁকিতে সহযোগিতা করে থাকে। যেকারণে কাঙ্খিত রাজস্ব আহরণে বঞ্চিত হয় সরকার আর কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়ে এসব দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা।