মোঃ জাহাঙ্গীর আলম : দৃষ্টিনন্দন প্লাকার্ড ফেস্টুন ব্যানারে মোড়া গোটা পুলিশ লাইনস। সকাল থেকেই গোটা শহরে উৎসবের আমেজ। দুপুর আড়াইটা থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের নানা সাজে আগমন। আর বিকেল ৩ টায় মনমুগ্ধকর পরিবেশ। জমকালো হৃদয়গ্রাহী ডিসপ্লে। সর্বোপরি সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃষ্ফূর্ত অংশ গ্রহণ। মনে রাখার মত ক্ষণ ২২ মার্চ বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধা ৬ টা। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হল যশোর জেলা পুলিশ আয়োজিত বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, বাঙালি জাতি বীর জাতি, বাঙালি যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখনই বিজয়ী হয়েছে। জাতি হিসেবে আমরা যখনই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, তখনই বিজয়ী হয়েছি। রাষ্ট্রের ভেতর ও বাইরের সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সারাবিশ্বের গবেষণা ও বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে। দেশের অগ্রযাত্রাকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকে দুই পায়ে মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যশোর পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশে ক্ষুধা এখন পরাজিত হচ্ছে। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। যা বিশ্বে রোল মডেল। বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশের কাছে গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বাংলাদেশের উন্নতি’। যেভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল।

তিনি যশোরের ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজনের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনের যে মনোরম ডিসপ্লে দেখেছি তাতে মুগ্ধ হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো কারণে পুলিশের সঙ্গে খেলাধুলার সম্পর্ক রয়েছে। শারীরিক গঠন ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা আছে। জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় বাংলাদেশ পুলিশের পজিশন রয়েছে। এখন কাবাডি, ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকসহ নানা জাতীয় পর্যায়ের খেলায় বাংলাদেশ পুলিশ অংশ নেয়। যশোরে এই ধরনের আয়োজন প্রত্যেক বছর অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পুলিশের প্রত্যেক ইউনিটেই খেলাধুলার চর্চা বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস নিয়ে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। শিগগির আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অবস্থান করতে পারবে। আমাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিংবা দুর্বলতার সুযোগ যেন ষড়যন্ত্রকারী প্রেতাত্মারা না পায়, তার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পুলিশ বাহিনীর সকল ভাল কাজে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) সভানেত্রী ও আইজিপির সহধর্মিণী জীশান মির্জা ও বাংলাদেশ পুলিশের খুলনা রেঞ্জ উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দীন বিপিএম (বার), খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার এবং যশোরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পুলিশ সুপার ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিবৃন্দ।

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ২৭টি ইভেন্টের মধ্যে প্রথমদিন (মঙ্গলবার) ১১টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এবং বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) সভানেত্রী ও আইজিপি সহধর্মিণী জীশান মির্জা। এরআগে পুলিশ সদস্যদের অংশগ্রহণে প্যারেড, মনোজ্ঞ ডিসপ্লে ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বার্ষিক পুলিশ সমাবেশকে কেন্দ্র করে যশোর পুলিশ লাইনে মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নেওয়ায় এই অনুষ্ঠান সবচেয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। অনুষ্ঠানে জেলার পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের জন্য ছিলো ১০০ মিটার দৌঁড় প্রতিযোগিতা। স্বভাব সুলভভাবে দৌঁড় না দিলেও অনুষ্ঠানে যতটুকু তারা অংশগ্রহণমূলক প্রদর্শন করেছেন পুলিশ প্রধানসহ অতিথি ও দর্শনার্থীরা উপভোগ করেন। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের হাঁটা প্রতিযোগিতা, আমন্ত্রিত অতিথিদের ১০০ মিটার দৌড় ও চেয়ার চেটিং আর বেলুন ফাটানো খেলা দর্শকদের প্রাণবন্ত করে তোলে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে ঢাকার তারকাখ্যাত শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাতেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দরা।