আইন ও আদালত | তারিখঃ মে ৩০, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5161 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : অবৈধ উপায়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস। চাকরিজীবনে যেখানেই কর্মরত ছিলেন দুই হাতে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এসআই থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হওয়া উত্তম কুমার গত বছরের ১ অক্টোবর অবসরে যান। তখন তিনি সিআইডিতে কর্মরত ছিলেন। এর আগে র্যাব-২ এ কর্মরত ছিলেন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, মূলত এসআই এবং পরিদর্শক থাকাকালে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা, যা নিজের সন্তান ও স্ত্রীর নামে দিয়েছেন। পাশ্ববর্তী দেশ এবং ইউরোপ-আমেরিকায় গড়েছেন একাধিক বাড়ি। দুদকের জালে আটকে যাবার আগে দেশ ছাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন উত্তম কুমার। তবে বৃহস্পতিবার আদালত তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। উত্তর কুমার সিআইডিতে কর্মরত অবস্থায় আলোচিত একাধিক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। সেসময়ও বিপুল সম্পদ করেছেন এই অসাধু কর্মকর্তা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য আদালত দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এই আদেশ দেন।
মামলার প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে দুদকের পক্ষে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক রুহুল হক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এই আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়, উত্তম কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়, যা এখন চলমান আছে। ইতোমধ্যে তার ও তার স্ত্রীর নামে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া বেশকিছু রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি দুদকের নোটিশ পাওয়ার পরপরই অসংখ্য হিসাব থেকে সব টাকা তুলে হিসাব বন্ধ করছেন, যা সন্দেহজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়। তিনি অনুসন্ধানের শুরু থেকে তেমন কোনও ধরনের সহযোগিতা করেননি বরং বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং অহেতুক কালক্ষেপণ করছেন।
অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায়, উত্তম কুমার সব হিসাব বন্ধ করে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছেন। তিনি বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য তার বিদেশ গমণে নিষেধাজ্ঞা একান্ত প্রয়োজন।
এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি উত্তম কুমার।
সব বিমানবন্দর ও ইমিগ্রেশনে চিঠি:
উত্তম কুমার যাতে দেশ ছেড়ে যাবে পালাতে না পারে একারণে দেশের সব বিমানবন্দর ও ইমিগ্রেশনকে জানাতে বলেছেন আদালত। এরই মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
কবে পুলিশে আসেন উত্তম:
মাগুরার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা উত্তম কুমার ১৯৮৯ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর তিনি পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। পরে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি পেলে তাকে সিআইডিতে পদায়ন করা হয়। এরপর র্যাব-২ প্রেষণে বদলি হন। গত বছরের মাঝামাঝি তিনি সিআইডিতে পুনরায় বদলি হন। এরপর অক্টোবরে অবসরে যান।
বিএনপি ঘরোনার:
উত্তম কুমার বিএনপি ঘরোনার অফিসার। কর্মজীবন যেখানেই চাকরি করেছেন সেখানেই আওয়ামী লীগের কর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি খুলনাসহ একাধিক বিভাগে ওসির দায়িত্বে ছিলেন। সেসময় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে মিশে বিপুল সম্পদশালী হয়েছেন। এসব সম্পদ স্ত্রী সন্তানদের নামে দিয়েছেন। বিএনপির আমলে বিভিন্ন অপকর্ম করলেও বতর্মান সরকার ক্ষমতায় এলে মাগুরার একজন সংসদ সদস্যদের অনুগত হন। এরপর ঢাকায় চলে আসেন।
উত্তম কুমার যেখানেই কর্মরত থেকেছেন টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেননি। তার অত্যাচার সব সময় অতিষ্ঠ থেকেছে সাধারণ মানুষ। অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকায় একাধিক বাড়ি করেছেন উত্তম কুমার।