স্বপন বিশ্বাস, শালিখা মাগুরাঃ মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য অধ্যায় চণ্ডীদাস রজকিনীর প্রেমের ইতিহাস। ধারণা করা হয় মধ্য যুগে বৃহত্তর যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার শালিখা থানার শতখালী গ্রামের বেগবতী নদীর পাশেই কয়েকটি ধোপা পরিবার বাস করত। সেখানে জন্ম নেওয়া রানী রজকিনী আর ঐ গ্রামের প্রতাপশালী ব্রাহ্মণ্য রায় পরিবারের এক এক সন্তান চণ্ডীদাস।

রজকিনী তার পিতার বাড়ির আঙ্গিনা ঘেষা একটা বড় দোহাই স্নান, জল নেওয়া ও কাপড় ধোঁয়ার কাজ করতেন। তাকে দেখে চণ্ডীদাস তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু রজকিনী ও তার পরিবারের কড়া শাসনের ভয়ে তা প্রকাশ করতে পারেনি। তাই তাকে এক নজর দেখার জন্য সে প্রতিদিন মাছ ধরার অছিলায় দোহার বিপরীত ঘাঠে বড়সি ফেলে বসে থাকতেন। কিন্তু রজকিনী তার দিকে কখনো নজর দিতেন না। তবু হতাশ হয়নি সে। এভাবে দিনের পর দিন চলে যায়। ১২ বছর পর শিব চতুর্দশীর এক শুভক্ষনে রজকিনীর হৃদয়ে ছুয়ে যায় চণ্ডীদাসের অনুভূতি।রজকিনী তার পানে চেয়ে জিজ্ঞাসা করেন মাছ কি কিছু পেলেন? তখন চণ্ডীদাস বলল, ১২ বছর পর একটি টিপ দিয়েছে। হয়ত ধরতে পারে। এ কাহিনী এক সময় ছড়িয়ে পড়ে সারা লোকালয়ে। তখন থেকেই ঐ দোহার নাম হয় চণ্ডীদাস রজকিনীর দোহা। এরপর তারা বেগবতী নদী ধরে চলে যায় অজ্ঞাত স্থানে। কিন্তু তাদের সেই পবিত্র প্রেম কাহিনি হয়ে ওঠে ইতিহাস। যা বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য ভান্ডার।

দোহাটি ঘিরে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। বর্তমান সময়ে এর দক্ষিণ দিকে রয়েছে চণ্ডীদাসের ও উত্তর পাশে রজকিনীর পতিত ভিটা। চণ্ডীদাসের বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা একটা মন্দিরের ডিভি বিদ্যমান। অতি নান্দনিক ও মনোরম পরিবেশের এই দোহাটিকে মাগুরার কুয়াকাটা বললে ভুল হবে না। তবে এর উপর অনেক দিন আগে থেকেই কু-নজর পড়েছে একটি ভুমি দস্যুদের। ফলে তারা এর প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। এটাকে সরকারি সহায়তায় আনতে পারলে দেশের একটি অন্যতম পর্যটন এলাকায় পরিনত হবে। ছুটে আসবে দেশ বিদেশের লাখ পর্যটক। এমনটি দাবি সাধারণ মানুষের। রজকিনীর পাশের বাড়ির প্রতিবেশী ৯০ বছর বয়সী সন্জিত সরকার বলেন আমরা বংশ পরম্পরায় এখানকার কাহিনি শুনে আসছি। এখানে সরকারের এগিয়ে আসা দরকার।