নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রপতির আত্মীয় ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে প্রতারণা করত তারা। অবশেষে মূলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেফতাররা হলেন, প্রতারক চক্রের মূলহোতা আব্দুল আজিজ ওরফে রাসেল (৫৫), তার অন্যতম দুই সহযোগী মো. নুরুল হুদা (৬৪) ও লুৎফর রহমান রতন (৪৮)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের কাগজ, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট ও নকল সিল জব্দ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির রমনা থানায় এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি। ৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর কল্যাণপুরের অরভী ওভারসিজের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ খালিকুজ্জামান হিরা। দীর্ঘদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকসহ নানা ভিসায় মানুষ পাঠানোর কাজ হয় তার প্রতিষ্ঠান থেকে। সৌদি আরবে হজ যাত্রীও পাঠানো হয়।

সম্প্রতি আব্দুল আজিজ ওরফে রাসেল নামে এক ব্যক্তি নিজেকে সাবেক সেনা সদস্য, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে হিরার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি হিরাকে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ আছে। এজন্য বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চান। হিরাসহ অন্যান্য ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস অর্জনে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এক ‘কর্নেলের’ সঙ্গে মিটিং করান আজিজ।

একপর্যায়ে লেনদেনের চুক্তি শেষে ৫০টি ভিসা দেওয়ার নামে হিরার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু পাসপোর্টে ভুয়া ভিসা দেওয়ায় কোনো শ্রমিকই বিদেশে যেতে পারেননি। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে দেখেন আজিজ ও তার সহযোগীরা সবাই আত্মগোপনে। শুধু হিরাই নন, আজিজের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন বহু ট্রাভেল ব্যবসায়ী ও রিক্রুটিং এজেন্সি।

প্রতারণার শিকার হিরা জানান, আজিজ নিজেকে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা দেওয়ার কথা বলে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এমনকি তার প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে উল্টো তাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হতো। আর আজিজ অস্ট্রেলিয়ার ফোন নম্বর ব্যবহার করতেন। তিনি সরাসরি দেখা করতেন না। এজেন্টদের মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন।

ডিএমপির রমনা থানায় ভুক্তভোগীদের মামলার প্রেক্ষিতে সাবেক সেনা সার্জেন্ট আব্দুল আজিজসহ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। আব্দুল আজিজ ছাড়াও অভিযুক্ত অন্য দুজন হলেন তার সহযোগী নুরুল হুদা ও লুৎফর রহমান রতন।