মোঃ রুবেল হোসেন | খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ মার্চ ১৩, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3726 বার
মোঃ রুবেল হোসেন, স্টাফ রিপোর্টারঃ অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার (অবঃ) শাহজাহান মিয়া (৫৯) পেনশনের টাকা সেবক পরিচালককে দিয়ে এখন চরম বিপাকে পড়েছেন। স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৫২), দুই পুত্র নিয়ে শেষ সম্বল অর্থ ফিরে পাওয়ার আশায় থানা আদালত উকিল পুলিশের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। কোথাও এতটুকু আশা মিলছেনা। উল্টো সেবক পরিচালক ও তাদের অর্থ কালেক্টর এজেন্টদের হুমকি ধামকির মুখে তাদের প্রাণ হারানো খুন বা যেকোন ক্ষয়ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, আর্মি সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার (অব:) শাহজাহান মিয়া ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে অবসরপ্রাপ্ত হন। তিনি পেনশনের পুরো টাকা ব্যাংকে জমা রাখেন। তিনি যশোরে চাকুরিতে থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালে যশোর পৌরসভার আরবপুর ৫৬৩ নং শহীদ মশিউর রহমান সড়কের বদরুল আলমের বাড়ি ভাড়া নেন। শাহজাহান মিয়া পেনশনের অর্থ পেয়েছেন এই তথ্যটি জানতে পারেন বাড়িওয়ালা বদরুল আলম। তিনি শাহজাহান মিয়া কে উদ্বুদ্ধ করে জানান সেবক মাল্টিপারপাস সোসাইটি লিঃ এ টাকা রাখলে প্রতি লাখে ১৬০০ টাকা মাসিক লাভ পাওয়া যাবে। একথায় বিশ্বাস করে ২৫/০১/২০১১ তারিখে ১২,৯০,০০০ টাকা গ্রহন করেন। টাকা গ্রহনের সময় বদরুল আলম, তার বোন সালেহা বেগম, বোনের জামাতা নাজমুল হোসেন, তার পিতা মাওলানা আব্দুস সাত্তার, ছোট ভাই রবিউল ও শরিফুল. মাতা আলেয়া বেগম, বদরুলের স্ত্রী রুমীনা বেগমসহ সকলেই উপস্থিত ছিলেন। বিনিময়ে একটি রশিদ দেন তারা।
তিন বছর পর্যন্ত মাসিক লাভ বাবদ টাকা শর্তের আংশিক পরিশোধ করেন বদরুল আলম ও তার পরিবারের লোকজন। বদরুল আলম সেবক মাল্টিপারপাস সোসাইটি লিঃ এর পরিচালক ও তার পরিবারের লোকজন অর্থ আাদায় এর দায়িত্ব পালন করতেন। তিন বছর পর ব্যাপক অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে সেবকের কার্য্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আরো অনেকের মত বদরুল আলমও পথে বসেন। প্রতারনার দায়ে বন্ধ হয়ে গেলে ঘর ভাড়া বাবদ পাঁচ হাজার সমন্বয় ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা দিত বদরুল আলম। এভাবে সব চলছিল। অতি কষ্টের মধ্যেও সবকিছু মেনে চুপচাপ ছিলেন শাহজাহান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্ত সর্বশেষ চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বদরুল আলমের ভাই রবিউল তাদের ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার আল্টিমেটাম দেয়। দুই দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি রান্নাঘরে তালা মেরে দেয়। সাত দিন খেয়ে না খেয়ে থাকার পর ৬ মার্চ শাহজাহানের স্ত্রী নুরজাহান বেগম তালা ভাঙতে উদ্যত হলে বদরুল আলমের ভাই রবিউলসহ আরো ৪/৫ জন সন্ত্রাসী হঠাৎ নুরজাহান বেগম কে মারধোর করেন। মাকে মারতে দেখে নুরজাহান বেগমের পুত্র সাহেদ ঘর থেকে বের হয়ে এসে মাকে রক্ষা করেন। মুমুর্ষ অবস্থায় মাকে ঘরে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর নুরজাহান বেগম বিষয়টি কোতয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
তবে বদরুল আলম নিজে বাড়ি না থাকলেও তার ভাই ও তাদের সাথে সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় শাহাজাহান মিয়ার ভাড়া বাড়ির সামনে পিছন দিয়ে মহড়া দিচ্ছে। গত তিন দিন ধরে সাপ্লাই পানি বন্ধ করে দিয়েছে বদরুলের পরিবারের সদস্যরা। তারা যে কোন পন্থায় শাহজাহান মিয়া, তার স্ত্রী পুত্রদের বাড়ি থেকে তাড়াতে উঠেপড়ে সম্ভাব্য করণীয় সবটাই করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে তালা খুলে দেয়। এসময়ও বদরুল আলমের ভাই রবিউল ও তার সাথের সন্ত্রাসীরা তখনও ঘটনাস্থলে ছিল। অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি কোতয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এস. আই (নিরস্ত্র) খান মাইদুল ইসলাম রাজিব এবিষয়টি তদন্ত করছেন। তিনি মোবাইল ফোনে জানান, আসামিরা নিরুদ্দেশ। তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে স্থানীয়রা ও ভিকটিমরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, বদরুল আলম রাজধানী ঢাকায় থাকেন। তবে অন্য সকলেই যশোরে বাড়িতে বহাল রয়েছেন। এমনকি বদরুলের ভাই রবিউল সন্ত্রাসী সাঙ্গপাঙ্গসহ বাড়ি থাকছেন এবং নিয়মিত মহড়া দিয়ে ভূক্তভোগী নুরজাহান ও তার স্বামী পুত্র কে ভয় ভীতি দেখাচ্ছেন।
ভিকটিম নুরজাহান জানান, তাদের অর্থ যেমন ফেরত দিচ্ছে না তেমনি তাদের বাড়ি ছাড়া করতে একের পর এক অপকর্মে লিপ্ত বদরুল আলমের পরিবারের সদস্যরা। রান্নাঘরে তালা মারার পর পুলিশ তা খুলে দেয়। এরপর গত তিন দিন আগে তারা সাপ্লাই পানি বন্ধ করে তাদের বিপাকে ফেলে দিয়েছে। এখন আমার নিজের, আমার স্বামীর বা দুই পুত্রের জীবনের নিরাপত্তা একেবারেই নেই। কেননা আসামিরা খুবই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী, জোচ্চোর, ঠগ ও লোভী প্রকৃতির। তাদের দিয়ে সকল অপকর্মই সম্ভব।