অনলাইন ডেস্ক : মাত্র সাত-আটদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন দুটি এলাকা থেকে ভারতের স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো দুটি ‘বাটাগুর বাস্কা’ কচ্ছপ (যা নর্দার্ন রিভার টেরাপিন নামেও পরিচিত) উদ্ধার হওয়ার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেই ট্র্যাকার ও কচ্ছপদুটি বাংলাদেশের কাছে ফেরত চাইছে।
ভারতের ‘সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভে’র ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর এস জোনস জাস্টিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি বিপন্ন প্রজাতির ওই কচ্ছপগুলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যায় কিনা দেখতে। তবে তারও আগে আমরা চাইবো কচ্ছপ দুটোর গায়ে যে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো ছিল, সেগুলো ফেরত পেতে।’

‘আমরা যতদূর জানি, যে জেলেরা ওই কচ্ছপগুলো পেয়েছিলেন তারাই নাকি ট্র্যাকারগুলো খুলে নিয়েছেন। কিন্তু ওই যন্ত্রগুলো খুবই দামি। ফলে সেগুলো ফেরত পেলে আমাদের গবেষণার কাজে খুবই সুবিধা হয়’, বলেন ওই কর্মকর্তা।

বিদেশে তৈরি এক-একটি স্যাটেলাইট ট্র্যাকারের দাম তিন লক্ষ ভারতীয় রুপিরও বেশি (চার হাজার ডলার)। তার ওপর কাস্টমস ডিউটি ও অন্যান্য শুল্ক দেওয়ার পর পর প্রতিটির জন্য বন বিভাগের প্রায় চার লাখ রুপি খরচ পড়ে যায়।

এরকমই ১০টি ট্র্যাকার বসিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশ থেকে দশটি বিপন্ন প্রজাতির বাটাগুর বাস্কা কচ্ছপকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছিল। তার মধ্যে সাতটি ছিল নারী ও তিনটি পুরুষ কচ্ছপ। ওই প্রজাতির কচ্ছপের আচরণ ও গতিবিধি, প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র নিয়ে গবেষণাই ছিল এই প্রোজেক্টের মূল উদ্দেশ্য।

এই দশটির মধ্যে একটি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনার দীঘলিয়া উপজেলায় ও আরেকটি গত ৫ মার্চ পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। পরে বাংলাদেশের বন বিভাগের কর্মকর্তা সে দুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আপাতত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে রাখেন।

‘বাটাগুর বাস্কা’ কচ্ছপ নিয়ে এই গবেষণা প্রকল্পে ভারত সরকারের সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের সঙ্গেই হাত মিলিয়ে কাজ করছে কচ্ছপ সংরক্ষণকারী সংস্থা ‘টার্টল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স’।

ওই সংস্থার গবেষক ও বায়োলজিস্ট শ্রীপর্ণা দত্ত এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘জানুয়ারিতে কচ্ছপগুলোকে প্রকৃতিতে ছাড়ার পর থেকেই আমরা ওগুলোর গতিবিধির ওপর নিয়মিত নজর রাখছিলাম। কদিন পরেই আমরা খেয়াল করি নদীনালা বেয়ে চারটে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে।’

‘তখন থেকেই বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে আমরা অনুরোধ জানিয়ে আসছি, তারা যেন সুন্দরবন এলাকায় সচেতনতা প্রচার চালান ও মাইকিং করেন – যাতে এই কচ্ছপগুলো পেলে কেউ তার কোনও ক্ষতি না-করেন। জেলেদের জালে দুটো ধরা পড়লেও সেগুলো বেঁচে গেছে, এটাই স্বস্তির বিষয়।’

শ্রীপর্ণা দত্ত আরও বললেন, বাটাগুর বাস্কা খুবই বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপ। এক সময় উড়িষ্যা থেকে শুরু করে মিয়ানমার, এমন কী সুদূর থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনাম উপকূলেও এর দেখা মিলতো।

কিন্তু এখন শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তৃত সুন্দরবনের উপকূলেই এই কচ্ছপ টিঁকে আছে। আর প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা বাটাগুর বাস্কার সংখ্যা ৩০-৪০ এর বেশি নয় বলেই গবেষকেদের অনুমান।

এছাড়া মিয়ানমারের একটি বৌদ্ধ মন্দিরের নিজস্ব জলাশয়ে একটি বাটাগুর বাস্কা কচ্ছপ আছেও বলে জানা যায়।

এত বিপন্ন বলেই এই প্রজাতির কচ্ছপগুলোর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে গবেষকরা এতটা চিন্তিত। আর সে কারণেই তারা বাংলাদেশের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন, কচ্ছপ দুটো ও তাদের গায়ে লাগানো স্যাটেলাইট ট্র্যাকারগুলো যেন ফেরত দেওয়া হয়।