নিজস্ব প্রতিবেদক : মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মেঝেতে গড়াগড়ি দিচ্ছেন এক বয়স্ক মানুষ। কাঁদছেন হাউমাউ করে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য মিলে বুঝিয়ে তাঁকে তোলা হলো। কিন্তু কান্না থামানো গেল না সহজে। একটু পরপরই বলছেন—তিনি ভোট করতে চান। মানুষের জন্য কাজ করতে চান। আর কাঁদছেন। তাঁর দুঃখ—তাঁর এই চাওয়ার কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি। বাতিল করা হয়েছে তাঁর মনোনয়নপত্র। ঘটনাটি রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের।

মনোনয়নপত্র বাতিল করায় ভীষণ দুঃখ পেয়ে আহাজারি করা এই ব্যক্তির নাম মো. আবদুল আলী বেপারী। এবারই প্রথম তিনি মানিকগঞ্জ–১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে এটিই তাঁর প্রথম নির্বাচন নয়। এর আগে তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচনে) অংশ নিয়েছেন। সেখানেও দুঃখ কম নয় তাঁর। কারণ, ভীষণভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে চাওয়া মো. আবদুল আলী প্রতিবারই জামানত হারিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়) গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নাতিকে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন আবদুল আলী বেপারী। রোববার দুপুরে যাচাইবাছাই শেষে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার। এরপরই আবদুল আলী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের বারান্দার মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকেন।

মো. আবদুল আলীর বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা গ্রামে। তিনি ইট-বালু সরবরাহের ব্যবসা করতেন। এখন অবসরে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। স্বশিক্ষিত আলীর তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সবাই শিক্ষিত। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের অমত থাকলেও তিনি ২০১১, ২০১৬ এবং ২০২১ সালে ইউপি নির্বাচন করেন। প্রতিবারই তিনি জামানত হারান। এরপরও নির্বাচনে অংশ নিতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই তাঁর শখ।

রোববার বেলা একটার দিকে যাচাইবাছাই শেষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল আলীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। এরপরই তিনি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের বারান্দার মেঝেতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কান্নাকাটি করেন। পরে সেখানে উপস্থিত আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে সান্ত্বনা দেন এবং প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলের পরার্মশ দেন।

আবদুল আলী বেপারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এখন আমার ভোটারদের মুখ দেখাব কেমনে? আমি আর বাঁচুমনা। আমি ভোট দিতে না পারলে মরুম, আমার জীবন রাখুম না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আবেদন, আমার ভোট আমাকে দিয়ে যেন মরতে পারি। আমার বিশ্বাস আছে, মানুষ আমাকে ভোট দিবে। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাইতে চাইছিলাম। যেকোনো চক্রান্তের মাধ্যমে আমার নমিনেশন (মনোনয়ন) বাদ দেওয়া হইছে। আমি এই চক্রান্ত বিশ্বাস করি না।’

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের অমত আছে জানিয়ে আবদুল আলী বলেন, ‘আমার স্ত্রী নির্বাচন করতে নিষেধ করলেও আমার মন চায়। নির্বাচন আইলে আমি ঠিক থাকতে পারি না। আমাদের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াইছি, তখন মনোনয়নপত্র এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে আসি। আমার স্ত্রী জানার পর গলায় দা ধরে। এরপরও আমি নির্বাচন করছি। এখন পরিবারের লোকজন খুব-একটা নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধা দেয় না। আমি যতদিন বাঁচি, নির্বাচন করেই যাব।’

আবদুল আলী বেপারীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলো কেন? এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা রেহেনা আকতার বলেন, ‘মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন ও টিন সার্টিফিকেট এবং স্বতন্ত্র-সমর্থক ভোটারের স্বাক্ষরের গরমিল থাকায় ওই প্রার্থীর (আবদুল আলী বেপারী) মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আগামী ৫ থেকে ৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে তিনি আপিল করার সুযোগ পাবেন।’ সুত্র: ইনডিফেনডেন্ট।