বিল্লাল হোসেন, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় নীতিমালা উপেক্ষা করে একটি ফাজিল মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে প্রভাষক পদে ইনডেক্সভূক্ত হয়ে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন মোঃ কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। গত ২৮ বছরে প্রায় কোটি টাকারও বেশি বেতন ভাতা ও সরকারী সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভূয়া নিয়োগ ও পদবি জটিলতা নিরসনের জন্য গভর্নিংবডির সভাপতি (এডিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মাদরাসা অধ্যক্ষ এবং কমিটির সাবেক এক সদস্য। পরে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ইউএনও’কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধান ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মো: কামাল উদ্দিন ১৯৯০ সালে ভালুকা উপজেলার তালাব হোসাইনিয়া ফাজিল মাদরাসায় জুনিয়র মৌলভী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর তিনি নিজ এলাকায় পাশের গফরগাঁওয়ের মধ্য লংগাইর বালিকা দাখিল মাদরাসায় (এমপিওভূক্ত) চাকুরী হওয়ায় সেখানে চলে যান। ওই মাদরাসায় প্রায় এক বছর শিক্ষকতা করেন কামাল উদ্দিন। এদিকে তালাব হোসাইনিয়া দাখিল মাদরাসাটিতে ১৯৯১ সালে আলিম শাখা খোলার সময়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯২ সালে কামাল উদ্দিন পূণরায় ওই মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালের মে মাসে আলিম এমপিওভূক্ত হওয়ার পর ওই নিয়োগ দেখিয়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রভাষক পদে ইনডেক্সভূক্ত হয়ে গত ২৮ বছর ধরে প্রায় কোটি টাকারও বেশি বেতন ভাতা উত্তোলনসহ সরকারী অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করছেন। অথচ ২০১৮ এর এমপিও নীতিমালা প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে আলিম মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদই ছিলো না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপিও সিটে কামাল উদ্দিনের ইনডেক্স নম্বর ০৩৩৩৫৭ (হাজারের কোটায়)। কিন্তু একই বছরে ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এসএম নজরুল ইসলামের ইনডেক্স নম্বর ৩৩৯৬২৬, মোস্তাফিজুর রহমানের ৩৩৮২৫৫ ও মফিজ উদ্দিনের ৩৪৬০২৫ (লাখের কোটায়)। অনলাইনে এমপিও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ০৩৩৩৫৭ ক্রমধারার আগের বা পরের এমপিও ইনডেক্সধারীরা বর্তমানে চাকুুরীরত নাই এবং ১৯৯৫ সালে মাদরাসাটি এমপিওভূক্ত হলেও তার ইনডেক্স নম্বরটির ক্রমধারা এরও বহু আগের বলে অনেকের ধারণা।

খোঁজ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরো জানা যায় যে, প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে টাঈাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার মোঃ আবদুল জলিল নামে এক ব্যক্তি উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। কিন্তু আলিম মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদটি না থাকায় এবং বেতন ভাতা না হওয়ার কথা বলে ওই ব্যক্তিকে নিয়োগপত্র দেয়া হয়নি। তবে ওই সময়কার নিয়োগপত্রের রেজু্যুলেশনে কামাল উদ্দিনের নামটি ঘষামাজা অবস্থায় রয়েছে।

কামাল উদ্দিনের নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগকারী মাদরাসা কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুস সামাদ জানান, ওই শিক্ষকের নিয়োগ রয়েছে উপাধ্যক্ষ পদে, কিন্তু তিনি অবৈধভাবে প্রভাষক পদে বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। প্রভাষক পদে তার কোন নিয়োগই নেই। গত ২৮ বছর তিনি সরকারী সুযোগ সুবিধা যা ভোগ করেছেন, তার সবই অবৈধ।

অভিযুক্ত শিক্ষক মো: কামাল উদ্দিন জানান, নিয়োগের বিষয়ে ডিজির সাথে কথা বলার পর ১৯৯৫ সালের উপাধ্যক্ষ পদের নিয়োগপত্রটি পরবর্তিতে প্রভাষক পদের সাথে সমন্বয় করেছেন। ২০১৮ সালের জনবল কাঠামোর নিয়মানুযায়ী তার নিয়োগপত্রটি বৈধ বলে দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে মাদরাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাওলানা মোজাম্মেল হক জানান, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রভাষক পদে কামাল উদ্দিনের কোন নিয়োগপত্র নেই, আছে উপাধ্যক্ষ পদে। এমনকি ওই সময়ের নিয়োগ সংক্রান্ত রেজ্যুলেশনে ঘষামাজা স্থানে কামাল উদ্দিনের নামটি রয়েছে। কামাল উদ্দিন প্রায় ২৮ বছর ধরে প্রভাষক পদে বেতন ভাতাদি ও সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছেন। দীর্ঘদিন পর পদবি জটিলতা নিরসনের জন্য মাদরাসার গভর্নিংবডির সভাপতি (এডিসি) বরাবর তিনি লিখিত আবেদন করেছেন। পরে গভর্নিংবডির সভায় ওই শিক্ষকের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং ওই সভার রেজ্যুলেশন কপি ডিজি বরাবর প্রেরণ করা হয়। ডিজির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও মাদরাসার গভর্নিংবডির সভাপতি মো: আরিফুল হক মৃদুল জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। বিষয়টি তিনি অবগত হয়ে ভালুকার ইউএনওকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বিধি অনুযায়ী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরশাদুল আহমেদ জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বিভাগীয় তদন্ত করে ওই শিক্ষকের বিষয়ে রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।