স্টাফ রিপোর্টার : ফসল উঠলে বীজের টাকা দিতে হবে, এই প্রলোভন দেখিয়ে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কোম্পানীর ফ্রী বিতরণের জন্য নমুনা বীজ চাষীদের গছিয়ে দিয়েছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। আর এই নিম্নমানের নমুনা বীজ নিয়ে গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করে আর্থিক ভাবে এলাকার একাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার মল্লিকা সিড গ্রুপের মাসুম বিল্লাহ নামের এক প্রতিনিধির নিকট হতে উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের বোধখানা গ্রামের মৃত হরেন মাস্টারের ছেলে সমির ভৌমিক প্রায় দুই মাস পূর্বে নিজের ও লিজ নেওয়া সর্বমোট ১৫ কাঠা জমিতে সামার এ্যাডভান্স রেইন নামক ফুলকপির বীজ বপন করেন। উক্ত প্রতিনিধি কোম্পানীর নমুনা বীজ দিয়ে কৃষকের সাথে কন্টাক্ট করে বলেন আপনি চাষ করেন, এখন আপনাকে বীজের মূল্য দেওয়া লাগবে না। আপনার জমিতে খুব সুন্দর ফুলকপি হবে। ফুলকপি বেচে আমাকে বীজের দাম দিবেন। কোম্পানীর প্রতিনিধির মুখের মিস্টি কথার প্রলোভনে পড়ে ফুলকপি চাষ করতে গিয়ে চাষের জমিতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে এখন দেখা যাচ্ছে ফুলকপির গাছে যে ফুল বের হচ্ছে সেটা ৩-৪ টা একসাথে করলে একশ গ্রাম ওজন হবে। যেটা বাজারে বিক্রয়ের অনুপযোগী। বর্তমানে এগুলো হবে গৃহপালিত পশুর খাদ্য।

সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা তথ্য অনুসন্ধানে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে উক্ত গ্রামের জমিতে গেলে দেখা যায় কৃষকের ফুলকপি গাছ গুলো তুলে একস্থানে স্তুপ করা রয়েছে। একই ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেনও ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ করে ১বিঘা জমিতে ও নাভারণের একাধিক চাষিরা এভাবে প্রতারিত হয়েছেন। যারা তাদের জমিতে মল্লিকা সিড গ্রুপের সামার এ্যাডভান্স রেইন নামক ফুলকপির বীজ চাষ করেছে তাদের সবারই এখন মাথায় হাত।

কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা টাকা দিয়ে ভালো বীজ কিনতে চাই। আমাদের নিকট থেকে কোম্পানী টাকা নিচ্ছে কিন্তু উন্নত মানে বীজ সরবরাহ করেনা। এই বিষয়ে নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তাদের বাজার তদারকি করতে হবে। না হলে আজ আমি, কাল আপনি ও পরশু আর একজন ঠকবে।

মল্লিকা সিড গ্রুপের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ বলেন, কোম্পানীর বীজের প্রথম পর্যায়ে ভালো পাইছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে খারাপ হচ্ছে। আমি কোম্পানীকে অবগত করেছি। কোম্পানী হয়তো বলতে পারে কি হয়েছে। তার পরে চাষের জন্য হয় তো ২ প্যাকেট বীজ দিয়ে দিবো। নমুনা বীজ দিয়ে টাকার কনটাকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন উত্তর দেননি।

বোধখানা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আয়ুব হোসেন বলেন, আমি অফিস সময়ে সব সময় এখানে থাকি। কিন্তু এই ফুলকপি চাষের বিষয়ে কিছু জানিনা।

উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, শীতকালীন ফসল গ্রীষ্মকালীন সময়ে কৃষকরা চাষ করছেন এজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তবে বীজের বিষয়টা হলো কোম্পানীর সমস্যা। কোম্পানী থেকে ভালো বীজ বাজারে আসলে কৃষক সেটা কিনে নিয়ে ভালো ফসল তৈরী করতে পারবে। সেই সময় তার নিকট প্রতিনিধির কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, এই কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তির তথ্য দেন আমি তাকে ডেকে কৃষকের ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।