খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ আগস্ট ২৪, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3483 বার
সানজিদা আক্তার সান্তনা : যশোর সদরের গাইদগাছি গ্রামের একটি বাড়িতে ডাকাত বলে চিৎকার দিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষনা, অতপর ৬জনকে গণপিটুনি দিয়ে মাসুদ নামে একজনকে হত্যা। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ৫জন । আহতদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীকে জড়ো করে ওই হামলা চালানো হয়। নিহত মাসুদ রানা যশোর সদর উপজেলার গাইদগাছি গ্রামের মৃত সোহরাব হোসেনের ছেলে।
তবে পুলিশ বলছে অন্য কথা। পূর্ব শত্রুতার জেরে কৌশল নিয়ে ওই ৬ ব্যক্তির ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওই গ্রামের জুলফিকার আলীর বাড়িতে।
তবে গ্রামবাসী জানিয়েছে, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক মাসুদ রানা নামে এক যুবক নিহত ও আরও ৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার দিনগত রাত ২টার দিকে যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের গাইদগাছি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বার্মিজ চাকু উদ্ধার ও একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গ্রামবাসি জানিয়েছে, ভোরে গ্রামের মসজিদের মাইকে কে বা কারা ঘোষণা দেয় গাইদগাছি গ্রামের জুলফিকার গাজীর শ্বশুর বাড়িতে একদল ডাকাত অবস্থান করছে। এই ঘোষণা শোনার পর গ্রামের লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে সেখানে অবস্থান করা ৬ জনকে ঘর থেকে বাইরে বের করে মারধর করে। এতে মাসুদ রানা নামে একজন ঘটনাস্থলে মারা যান। একই ঘটনায় আরো ৫ জন আহত হন। আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
আহতরা হলেন, অভয়নগর উপজেলার চেঙ্গুটিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে জুলফিকার আলী, মণিরামপুর উপজেলার করেরআইল গ্রামের শামীম মোল্লার ছেলে সজিব মোল্লা, আলমগীর হোসেনের ছেলে সুমন হোসেন, সুবলকাঠি গ্রামের মনসুর আলী বিশ্বাসের ছেলে ইস্রাফিল হোসেন ও বারপাড়া গ্রামের বাবলু গাজীর ছেলে মঈনুদ্দিন।
নিহতের চাচাতো ভাই জিয়াউর রহমান বলেছেন, ‘আমার ভাই মাসুদ কাঠ ব্যবসা করতো। তবে সে একজন মাদকাসক্ত। প্রায় রাতে সে যশোর সদর উপজেলার গাইদগাছি গ্রামে গিয়ে জুলফিকারের বাড়িতে মাদক সেবন করত। ঘটনার দিন রাতে সে জুলফিকারের বাড়িতে ৫ বন্ধুকে সাথে নিয়ে মাদক সেবন করছিল। মধ্যরাতে অজ্ঞাতনামা কয়েক যুবক দেশিয় অস্ত্র সহকারে জুলফিকারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা আমার ভাইকে সহ ঘরের মধ্যে থাকা সকলকে টেনেহিচড়ে বাইরে নিয়ে আসে এবং ডাকাত ডাকাত চিৎকার করে পেটাতে শুরু করে। পরে তারা গুরুতর আহত অবস্থায় ছয়জনকে অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের বনগ্রাম কাটাখালি মোড়ে এনে ফেলে রাখে। ওরা আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে নাটক সাজিয়েছে। আমি এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি।’
স্থানীয় সূত্র ও নিহতের স্বজনরা জানান, মাসুদ রানা বসুন্দিয়া মোড়ে বসবাস করলেও তার পিতার বাড়ি পার্শ্ববর্তী অভয়নগর উপজেলা বনগ্রামে। তিনি গুড়ি কাঠের ব্যবসা করেন। কিন্তু বনগ্রামের কাটাখালী এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুরাদ, বাবু, শিমুল, হাকিম, পিন্টুসহ একটি চক্রের সাথে মাসুদের বিরোধ ছিল। সম্প্রতি বনগ্রাম কাটাখালী সুপারী বাগান জামে মসজিদের গ্রিল চুরি হয়। মুরাদ, শিমুল চক্রটি এই গ্রিল চুরির জন্য জুলফিকার নামে এক যুবককে অভিযুক্ত করে। জুলফিকারের বাড়ি চেঙ্গুটিয়ায় হলেও বনগ্রামের পার্শ্ববর্তী গাইদগাছি গ্রামে শ্বশুর আকবর গাজীর বাড়িতে তিনি বসবাস করেন। গ্রিল চুরির সূত্র ধরে জুলফিকারের শ্বশুর বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয় মুরাদ-শিমুল চক্র।
নিহত মাসুদের মা খাদিজা পারভীন জানিয়েছেন, জুলফিকার বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাসুদের বাড়িতে যায়। এসময় জুলফিকারকে খেতে দেন মাসুদের মা। খাওয়া শেষে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়ার জন্য মাসুদের কাছে অনুরোধ করে। বুধবার মধ্যরাত ১২টার দিকে মাসুদ চার সহযোগী ইস্রাফিল, সজিব, সুমন ও মইনুদ্দিনকে সাথে নিয়ে জুলফিকারকে তার শ্বশুর বাড়িতে তুলে দিতে যায়। এ খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে মুরাদ, শিমুল, বাবু, পিন্টু, হাকিম, আল-আমিনসহ ১০/১২ জন রামদা, লাঠি সোটা, কোদালের আচাড়িসহ দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মাসুদ ও তার সহযোগীদের উপর হামলা চালায়। এরপরই তারা ‘ডাকাত পড়েছে’ বলেও মসজিদের মাইকে প্রচার করে। পাশাপাশি আহত ৬ জনকে চিকিৎসার কথা বলে প্রতিবেশি মোশারফ হোসেনের ছেলে ফিরোজ হোসেনের ভ্যানে তুলে বনগ্রাম কাটাখালী মোড়ে নিয়ে যায়।
সেখানে মাসুদকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সবাইকে ফেলে রেখে হামলাকারীরা চলে যায়। পরে খবর পেয়ে অভয়নগর থানা ও বসুন্দিয়া ক্যাম্পের পুলিশ তাদের উদ্ধার করে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিমুলকে আটক করেছে। শিমুল অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে।
প্রেমবাগ ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন জানান, ‘ডাকাত সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এমন সংবাদ পেলেও নিরাপত্তার অভাবে রাতে সেখানে যেতে পারিনি। তবে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরে পুলিশ এসে মরদেহ ও আহত পাঁচজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
যশোর কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, ‘একদল যুবক গভীর রাতে গাইদগাছি গ্রামের একটি বাড়িতে বসে মাদক সেবন করছিল। এসময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আরেক দল যুবক তাদের ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। এতে ৫ যুবক গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাসুদ রানা নামে একজন। খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এসময় আহত ৫ জনকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’