সাফানুর রহমান : ১০ দফা দাবিতে গত ছয় মাস নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ বুধবার (১২ জুলাই) সমাবেশ থেকে একদফা আন্দোলন ও নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিতে যাচ্ছে দলটি। সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুণর্বহালের দাবিতে এই এক দফার আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঢাকাকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি ঢাকাকেন্দ্রিক সিরিজ কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, নয়াপল্টনে বুধবারের সমাবেশে স্মরণকালের সর্বোচ্চ লোক সমাগমের পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। এতে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা জোরালো ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি আন্দোলন সহযোগী ৩৬ দলসহ বিভিন্ন মহলের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে।

এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সমমনা জোটগুলোর সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার থেকে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করেছে বিএনপির লিঁয়াজো কমিটি। সমমনা জোটগুলোর বাইরেও দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে প্রস্তুতি সভা করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। আরো ৩৫ দল যুগপৎভাবে বিএনপির সঙ্গে কর্মসূচি পালন করলেও থাকছে না তাদের দীর্ঘদিনের সঙ্গী জামায়াত ইসলামী। কর্মসূচির ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।

পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি চূড়ান্ত না হলেও আগামী শুক্রবার ঢাকাজুড়ে মানববন্ধন বা মানবপ্রাচীর অথবা বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে একদফার আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর চিন্তা বিএনপির।

ঢাকাজুড়ে মানববন্ধনের পর পর্যায়ক্রমে পদযাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট, সমাবেশের মতো কর্মসূচি ঘুরেফিরে আসতে পারে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আসবে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি। এতদিন ধরে ঢাকার বাইরে কর্মসূচি হলেও একদফা আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে রাজধানী ঢাকা। সব কর্মসূচি পালন হবে যুগপৎভাবে। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে শরিকরা যার যার প্ল্যাটফর্ম থেকে একদফার আন্দোলন ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। ঘোষিত হতে পারে ‘রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখাও’।

এ বিষয়ে বিএনপির লিঁয়োজো কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আগের মতই। কালকে (আজ) শুরু। মূলত, আমাদের ফোকাস ছিল এক দফার আন্দোলনের ম্যাসেজ অভিন্নভাবে আন্দোলনে শরিকরা যাতে একযোগে ঘোষণা করি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎভাবে আন্দোলন করছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন ডাক দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে একসঙ্গে করে যুগপৎ আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া হবে। সেজন্য ১২ জুলাই যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। দলগুলো স্ব স্ব জায়গা থেকে এক ঘোষণা দেবে। এর মাধ্যমে দাবি আদায়ে সফল হবো।

বিএনপি সূত্র জানায়, দুপর ২টায় নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। একই সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাব, ১২ দলীয় জোট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট দুপুর ১২টায় প্রেসক্লাবে সমাবেশ, এলডিপি বিকাল ৫টায় দলীয় কার্যালয়ে, গণফোরাম আরামবাগের নটরডেম কলেজের বিপরীতে, গণঅধিকার পরিষদ (নূর) বিকাল ৩টায় পল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাব, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবি জোট বেলা সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাব এবং লেবার পার্টি বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ২০১৪ সালে হরতাল অবরোধের কঠোর কর্মসূচি ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে বিএনপি দুর্বল ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনের সাদামাটা কর্মসূচি দিয়ে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন সফল হওয়া সম্ভব হবে না- এমন বিষয় উপলব্ধি করছে দলটি। যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। তাই এবার একটু কঠোর কর্মসূচির পথে হাটছে দলটি।

এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও সরকার বিরোধীদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দুটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দল।

বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন এবং চলমান রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত রবিবার থেকে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। সরকার ও বিরোধীদের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে গতকাল। এছাড়া মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘন ঘন বাংলাদেশে সফর করছেন এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের অনুষ্ঠানগুলোতেও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন বিদেশি দূতরা। যদিও ক্ষমতাসীন দল সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে বার বার বিদেশী দূতদের জানিয়ে আসছে। বিপরীতে বিএনপি তার মিত্ররা সরকারের পদত্যাগ ও তত্বাবধায়ক সরকার পূর্ণবহালের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবি আদায়ে এক দফার আন্দোলনে নামছে দলটি।