সানজিদা আক্তার সান্তনা : এবার যশোর জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত জেলায় ৮০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে যশোরে ভর্তি হয়েছে ২৩ রোগী।

এ পরিস্থিতিতে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য‌ ‘ডেঙ্গু কর্ণার’ নামে আলাদা ওয়ার্ড প্রস্তুত করেছে। ওই ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করা হচ্ছে বলে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক জানান।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানান, গত জুন মাস নাগাদ যশোরে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এ কারণে ১ জুলাই থেকে পরিস্থিতি মনিটরিং শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের সে মনিটরিংয়ে বেরিয়ে আসে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির খবর। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত জেলায় মোট ৮০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৪ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকি ১৪ জন রোববার পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যশোর সদর উপজেলা এলাকায় ও অভয়নগরে ডেঙ্গু আক্রান্ত এসব রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

সূত্র জানান, যশোরে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভয়নগর উপজেলা এলাকায়। এ উপজেলায় মোট ২৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া, ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যশোরে এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন। যশোর সদর উপজেলা এলাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন, চৌগাছায় ৬ জন, কেশবপুরে ৫ জন ও শার্শায় ৬ জন রয়েছেন।

এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে ডেঙ্গু যেহেতু সংক্রামক রোগ, সেহেতু যশোর জেনারেল হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসার জন্য আলাদা বিশেষায়িত ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। যার নামকরণ করা হয়েছে ডেঙ্গু কর্ণার। এ ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভর্তি রেখে পৃথকভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যাতে আক্রান্তদের মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এ লক্ষ্যে ওয়ার্ডে প্রতিটি রোগীকে মশারির ভেতরে রাখা হয়েছে এবং তাকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ প্রতিম চক্রবর্তী বলেন, রোববার জেনারেল হাসপাতালে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৪ জন ও বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৪ জন। অসুস্থদের মধ্যে ২ জন নারী রয়েছেন।

এ ব্যাপারে যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক বলেন, যশোরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তবে সেই পরিস্থিতি এখনো খারাপ পর্যায়ে যায়নি। অবশ্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যাতে সব পরিস্থিতি সহজেই মোকাবেলা করা যায়। তিনি বলেন, যশোর সদর উপজেলা এলাকা ও অভয়নগর উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে সদর ও অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুণ অর রশিদ বলেন, ইতিমধ্যে তারা হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্ণার খুলেছেন এবং সেখানে রেখেই আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া বর্তমানে তাদের যথেষ্ট পরিমাণে স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধের মজুদ রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ হয়ে থাকে। তবে এ বছর আগেভাগেই ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। তারপরও এ অবস্থা মোকাবেলায় তারা সক্ষম বলে তিনি জানান।