সাফানুর রহমান : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে ভোটের মাঠ গোছাতে সক্রিয় আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কঠোর আন্দোলনের বার্তা মাথায় রেখে এরই মধ্যে চূড়ান্ত ছক কষেছেন ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি রাজপথে মোকাবিলা করতে চাইলেও ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ, এমন মনোভাব নিয়েই সম্পন্ন করা হচ্ছে সব ধরনের প্রস্তুতি।

প্রতিপক্ষ দলের বিভিন্ন কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি বাস্তবায়ন ছাড়াও সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং শরিক দলের নেতাদের মাঠে রাখতে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত টানা কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ইতোমধ্যেই সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো আন্দোলন দানা বাধাতে চাইবে জুলাই থেকেই, যা নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নিতে চাইবে বিরোধীরা। এ হিসাব মাথায় রেখে সরকার পতন আন্দোলনকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে জুলাই মাসকেই মোক্ষম সময় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিরোধী শিবিরকে দমিয়ে রাখতে নানান কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক জোট ১৪ দল মাঠে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছে।

একই সঙ্গে বিরোধী শিবিরের বিভিন্ন ‘অপপ্রচার ও গুজবের’ জবাব দেওয়া, সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অতীতের ‘আগুন-সন্ত্রাসের’ কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতেও নেওয়া হচ্ছে বিশেষ পরিকল্পনা। এ ছাড়া নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়াসহ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে তৃণমুল পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাঠ গোছানো এবং রাজধানী থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ, জনসভা, পথসভা ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে নতুন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সে বিষয়েও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া দেশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা করে কেউ যেন স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে- সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে কেন্দ্রের দেওয়া নির্দেশনা তৃণমূলে পৌঁছানো হয়েছে। বিএনপিকে কোনো ধরনের ছাড় না দিতেও নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত, তাই জনগণের কথা ভাবে। বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ভাবে না। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি তুলেছে তা কখনো পূরণ হবে না। আগামী নির্বাচন হবে দেশের সংবিধান অনুযায়ী। আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে আছে।’

আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী যারা সংসদে আছে, তাদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হবে। বিএনপি সংসদে নেই, যদি থাকত সেক্ষেত্রে হয়ত সুযোগ থাকতো। যদিও এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচন এলে অনেক দলের নাম শোনা যায়। যে আন্দোলনে জনগণের সাড়া নেই, সেই আন্দোলন আসলে আন্দোলন নয়। বিএনপি আন্দোলনের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা করলে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কড়া জবাব দেওয়া হবে।’