খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ জুন ৩০, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4049 বার
বিশেষ প্রতিনিধি : ঈদের ছুটিতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে স্মরনকালের রেকর্ড যাত্রী পারাপার বেড়েছে।
আগে প্রতিদিন গড়ে তিন-চার হাজার যাত্রী পারাপার হলেও এখন সেটা বেড়ে অন্তত ৮হাজার ছাড়িয়েছে বলে ইমিগ্রেশনে সুত্র জানিয়েছেন।
ঈদুল আযহার সরকারি ছুটিতে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারত ভ্রমণে যাচ্ছেন।স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, চিকিৎসা,ব্যবসা, কেনাকাটার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ছেন এসব মানুষ।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে এখন ভ্রমণপিপাসু মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ভিসা সহজলভ্যতা ও খরচ কম পড়ায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতগামী যাত্রীর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েছে চলেছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবীব বলেন, ঈদের ছুটিতে যাত্রী সংখ্যা ২২ জুন থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে। ১৬ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৭৩৯ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ২২ হাজার ৬৭৩ জন এবং ভারত থেকে এসেছেন ৩০ হাজার ৬৬ জন।
“স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার যাত্রী পারাপার হলেও এখন সেটা বেড়ে অন্তত সাত থেকে ৮হাজার হয়েছে। তবে আগে ইনকামিং ও আউটগোয়িং যাত্রীর সংখ্যা প্রায় সমান থাকলেও এখন আউটগোয়িং যাত্রীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন।”
শুক্রবার সকালে চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল চেকপোস্টের আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে পুলিশ, আনসার ও বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্টে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্টের কাজ শেষ করে ভারতীয় চেকপোস্টে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘলাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ওপারের ইমিগ্রেশনের কাজ ধীরগতির কারণে যাত্রীদের এ দীর্ঘলাইন এমন অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
ভারতীয় ইমিগ্রেশন থেকে ভারতীয় কাস্টমস, মেইন গেট, নোম্যান্সল্যান্ডে কয়েকটি গোলাকার লাইন পেরিয়ে আশেপাশের মাঠ ছাপিয়ে গেছে লাইন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মা ও শিশুদের কষ্টের সীমা নেই। অনেক রোগীকে রাস্তার ওপরই বসে থাকতে দেখা গেছে। প্রচণ্ড রোদে ও খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ।
শুক্রবার বেনাপোল চেকপোস্টে ঢাকা থেকে আসা বিশিষ্ট সাংবাদিক ওমর আলির সাথে কথা হয়।
ওমর আলি বলেন, বেনাপোল ইমিগ্রেশন বরাবরই সকালের দিকে প্রচন্ড ভীড় থাকে। এখানে বন্দর ব্যবহারের জন্য আলাদা সার্ভিস চার্জ (পোর্ট ট্যাক্স) নেওয়া হলেও মানুষকে বসতে দেওয়া তো দূরের কথা, দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নেই। খোলা আকাশের নিচে রোদ বৃষ্টির মধ্যেই রোজ হাজার হাজার লোককে পার হতে হয়। প্রতিদিন অনেক ছাত্র, শিক্ষক,
সাংবাদিক, চিকিৎসক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী পেশাজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন কাজে কলকাতা যায়। ইমার্জেন্সি চেক ইন করার জন্য গেটের বাইরে আলাদা একটা কাউন্টারের ব্যবস্থা রাখা দরকার।
গোপালগঞ্জের কামনা রানী বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, তাই ঘুরে বেড়ানোর সময় পাই না। এবার ঈদের লম্বা ছুটি পাওয়ায় ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি। ভারতে কয়েকজন আত্মীয় আছেন এ সুযোগে তাদের সঙ্গেও দেখা হবে এবং বেড়ানোও হবে।
শরিয়তপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা বীনারানী শারীরিক ভাবে অসুস্থতায় ভুগছেন। ভারতে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাবেন। কাজের ব্যস্ততার কারণে এতদিন সময় করতে পারেনি। লম্বা ছুটিতে ব্যস্ততা কম থাকায় এবার এ সুযোগে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। চিকিৎসা শেষে ভারতের কয়েকটি দর্শনীয় স্থানও ঘুরবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।
ট্রাভেল ট্যাক্স দ্বিগুণ বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তকে অমানবিক ও অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন সাংবাদিক ওমর আলী। তিনি বলেন, এই পথে প্রতিদিন অনেক রোগি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান, তারা কেউ বেড়াতে যাননা, তাদের কাছ থেকে ট্রাভেল ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে কেন? বাংলাদেশের ছাত্ররা অনেকেই ভারতে পড়তে যান, তারা কেন ট্রাভেল ট্যাক্স এর আওতায় পড়বে? সাংবাদিকরা বিভিন্ন সভা সেমিনার ওয়ার্কশপে যান, তাদেরকেও ট্রাভেল ট্যাক্স দিতে হয়। ভারতীয়রা অনেক ভদ্র, তারা ট্রাভেল ট্যাক্স নেয়না। তারা পর্যটকদের বেশি বেশি বেড়ানোর সুবিধার জন্য ট্রাভেল ট্যাক্স নেয়না।
আমরা ট্রাভেল ট্যাক্স নেওয়ার পর কি পর্যটকদের বিশেষ কোনও সেবা দেই? পর্যটকরা বিপদে পড়লে বা দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলে আমরা তো কোনও সাহায্য করিনা। তাহলে ট্রাভেল ট্যাক্স কেন নিচ্ছি। সরকার ট্রাভেল ট্যাক্সের মাধ্যমে শতশত কোটি টাকা আদায় করছে বটে, কিন্তু পর্যটকদের সামান্যতম কোনও সার্ভিস দিচ্ছেনা।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবীব বলেন, ঈদের ছুটিতে যাত্রী সংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে।যাত্রীদের সেবায় ইমিগ্রেশনে আমাদের লোকজন একটানা কাজ করে যাচ্ছে। কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি হবে না আশা রাখি। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য ইমিগ্রেশনে নজরদারি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যাত্রীসেবা বাড়াতে ইমিগ্রেশন চত্বরে পুলিশের জনবল বাড়ানো হয়েছে।