খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ জুন ৫, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2238 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক সিমান্ত চেকপোষ্ট বেনাপোল কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে দালালমুক্ত ঘোষণা দিলেও এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভিআইপি দালালরা চালিয়ে যাচ্ছে বিনাচেকে যাত্রী পারাপারের কাজ। যারফলে আশানুরুপ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সুত্রমতে আরো জানা গেছে, চেকপোষ্টে প্রায় শতাধিক বিভিন্ন এন্টার প্রাজের সাইন টাঙ্গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সেসকল এন্টারপ্রাইজ বা দোকানে নেই কোন মালামাল ফাকা ঘর। তবে ঐসব ঘরে ৩/৪জন করে স্টাফ আছে কাজ করার জন্য। এদের কাজ হচ্ছে পাসপোর্ট যাত্রী কৌশলে তাদের ঘরে নিয়ে যাওয়া। কম সময়ে বিনাচেকে কাস্টমস ইমিগ্রেশন পার করে দেওয়ার কথা বলে এবং তাদের কাছে থাকা টাকা ডলার হুন্ডির মাধ্যমে ওপারে পাঠানো। তাদের জানানো হয় হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে রেট বেশি পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, প্রতিদিন বিকাল ৫টার পরে দেখা যায় ইমিগ্রেশন পুলিশ ও কাস্টমস সদস্যরা বিভিন্ন এন্টার প্রাইজের ঘরে ঘরে যেয়ে পাসপোর্ট প্রতি তাদের নির্ধারিত হারে টাকা আদায় করতে। কে কয়টা পাসপোর্টের কাজ করেছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও কাস্টমস সদস্যরা লিখে রাখেন। দিনশেষে তা কালেকশন করে নেন।
এসকল এন্টারপ্রাইজের মালিকরা পাসপোর্ট যাত্রীর সঙ্গে চুক্তি করে চেকপোষ্টে কর্মরত ভিআইপি দালালদের মাধ্যমে পারাপারের কাজ করিয়ে থাকে। এয়াড়াও আছে ল্যাগেজ ব্যবসা। পসপোর্ট যাত্রীর সাথে ল্যাগেজ অনুযায়ী ৫হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সাধারণ দালালগন চুক্তি মাফিক সরকারি রাজস্ব ফাকি দিয়ে বিনাচেকে পার করিয়ে নিচ্ছেন এসকল ভিআইপি দালালদের মাধ্যমে। এই চুক্তির মধ্যে ভিআইপি দাললরা পায় ১হাজার থেকে ৫হাজার টাকা পর্যন্ত। বেশি টাকা পওয়ার আশায় মাঝে মধ্যে ভিআইপি দালালরা ল্যাগেজ পার্টির সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ল্যাগেজ ছাড় করিয়ে থাকে। বিপত্তি বাধে তখন। কারণ এতদিন সাধারণ দালালদের মাধ্যমে ভিআইপিরা কাজ করিয়ে দিত। যারফলে সাধারণ ও ভিআইপি দালালদের মাঝে মন কাষাকষি এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সুত্রটি আরো জানায়, ইমিগ্রেশন পুলিশ ও কাস্টমস যখন একটু কড়াকড়ি করে তখনই ভিআইপি দালালরা বিভিন্ন পত্রিকায় ইমিগ্রেশনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করিয়ে থাকে। যারফলে এসকল ভিআইপি দালালদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস।
বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। ইতিমধ্যে বেশকিছু পাসপোর্ট দালালকে আটক পুর্বক জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশের বিশেষ নজরদারিতে আছে। তারই ফলশ্রুতিতে বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ভূঁইয়ার দিকনির্দেশনায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে প্রতিদিন নজরদারি করছেন পুলিশের চৌকস টিম। তবে নামের শেষে সাংবাদিক নামধারী দালালরা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মকান্ড। চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনে বহিরাগত দালাল মুক্ত হলেও কথিত সাংবাদিক নামধারী ব্যাক্তিরা বিনাচেকে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস পারাপার ও ল্যাগেজ পারাপারে ব্যাস্ত দেখা যায়। এই সকল ভিআইপি দালালদের ল্যাগেজ কাস্টমস, বিজিবি সদস্যরা কোন চেক বাদেই ছেড়ে দেন। যারফলে সরকার আশানুরুপ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যে দু’একটি ল্যাগেজ আটক পুর্বক শুল্ককর আদায় করা হয়।
গত কয়েক দিনের কড়া নজরদারিতে আশানুরূপ সাফল্য লাভ করাই পাসপোর্ট যাত্রীরা এখন অনেক খুশি। তবে বহিরাগত দালালরা ভেতরে ঢুকতে না পারলেও ভিআইপি দালালরা ইমিগ্রেশনের মধ্যে ঢুকে নির্দ্বিধায় তাদের কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে বহিরাগত দালালদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে বহিরাগত দালাল ও ভিআইপি দালালদের মাঝে সংঘর্ষ বাধতে পারে।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, পোর্ট এলাকাকে দালাল মুক্ত করতে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং এই অভিযান চলমান থাকবে।