সাঈদ ইবনে হানিফ : জাতীয় মাছের নাম পাঙ্গাশ” ফলের নাম আঙ্গুর, ফুলের নাম গাঙ্গের ফুল, উত্তর দেওয়া কিউট শিশুটির ভিডিওটা যেমন মজার তেমনই শিক্ষনীয়। মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রের এই প্রশ্নউত্তর ভিডিও টি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে ওই ভিডিওটা আমাদের অন্যান্য স্কুল-মাদ্রাসার আর কলেজের কিছু শিক্ষকদের দেখে দরকার। ভিডিওটা দেখলে হয়তো তাদেরকে বুঝতে সহজ হবে যে একজন শিক্ষকের মানসিকতা আচরণ কেমনে হতে হয়।

এখানে মজার চেয়েও বড় একটা বিষয় আছে, যেটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবে না ।

শিশুটি তিনটা প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিয়েছে। জাতীয় ফলের নাম বলেছে আঙ্গুর ফল। জাতীয় মাছের নাম বলেছে পাঙ্গাস। আর জাতীয় ফুলের নাম বলেছে গাঙ্গের ফুল।

মজার ব্যাপার হলো, ছেলেটার উল্টাপাল্টা উত্তর শুনে ঐ শিক্ষক কিন্তু একবারের জন্যও বিরক্তি বোধ করেন নাই। একবারের জন্যও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে নাই। একবারের জন্যও ছেলেটাকে অন্য সবার সামনে ছোট করে নাই। জাস্ট ঠিক উত্তরটা বলে দিয়েছে এবং দিয়ে আবার প্রশ্ন করেছে।

ভুল উত্তর শুনে একবারের জন্যও ওই শিক্ষক কিন্তু বলে নাই, তুই তো কিছুই পারিস নাই। তোরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। ফলে, ওই ছেলেটা এতো এতো ভুল করার পরেও তার হাঁসি এতোটুকু কমে নাই। কনফিডেন্স এতোটুকু কমে নাই। সে পারুক বা না পারুক, হাঁসতে হাঁসতে কথা বলতে পেরেছে শিক্ষকের সাথে। (এই আচরণটির এবং এমন একটি আদর্শ মানুষসিকতার অভাব কিন্তু বর্তমানে আমাদের স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষকের মধ্যে রয়েছে)। কারণ মাঝে মধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমন কিছু অভিযোগ পায় যা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করতে কষ্ট হয়। বেশিরভাগ শিক্ষকের আচরণ তো এমন যে-ভুল উত্তর তো দূরের কথা, ঠিক উত্তর দিলেও অনেক সময় আমাদের শিক্ষকরা উত্তর নেন না, আরো উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে সবার সামনে শিক্ষার্থীদের লো ফিল করানোর চেষ্টা বেশি সব স্কুল-মাদ্রাসা ইউনিভার্সিটিতেই আছে। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে মনে হয়, আপনার সবকিছুর অধিকার আছে, শুধু ভুল করার অধিকারটা নাই। এইখানে পান থেকে চুন খসলে আপনাকে বকাবকি করা হবে, আপনাকে অপমান করা হবে, এমনকি আপনাকে দেখে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হবে।

কেন একটু কিছু হলেই তারা ঝুলে পড়ে? এইটা কিন্তু একদিনে হয় না। বরং দিনে দিনে আয়োজন করে, সবাই মিলে এখানে ছেলেমেয়েদের কনফিডেন্স ধ্বংস করে দেওয়া হয়, মাথায় ঢুকাইয়া দেওয়া হয়, তুমি আসলে কিচ্ছু পারো না। এভাবে একদিন শিক্ষার্থীরা তাদের মনোবল হারিয়ে লো ফিলে আক্রান্ত হয়। ওই ভিডিওটি আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, মাদ্রাসার শিক্ষক যে শুরুতে বললেন, কেমন আছেন? সকালে খাইছেননি? ওই ভিডিও দেখে আপনাদের হয়তো মজা লাগেছে কিন্তু আমি ওই ভিডিওর মাঝে পেয়েছি অনেক কিছু পেয়েছি একজন শিক্ষকের প্রকৃত আচরণ এবং মহত গুন। বাচ্চা ছেলেটা যে ভুল উত্তর দিয়েও হাঁসতে পেরেছে। ওই হাঁসিটা আমি বা আমরা এমনকি ঠিক উত্তর দিয়েও কোনদিন হাঁসতে পারি না, জানেন? বিরাট বিরাট ডিগ্রি, বিরাট বিরাট গবেষক, বিরাট বিরাট টিচার অথচ তারা আপনাকে কোনদিন জিজ্ঞেসা করেছে খেয়েছেন কি-না। এতঅত ভুলের পরও আপনার মূখে হাঁসির ফুলকি ঝরাতে পেরেছে?

আমি ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানায়, ভালোবাসা জানায়, অভিবাদন জানায়, পাশা পাশি স্বপ্ন দেখি, একদিন বাংলাদেশের প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ভুল উত্তর দিয়েও শিক্ষকদের সামনে এমন করে হাঁসার কম্ফোর্ট আর সাহসটুকু পাবে!