সাঈদ ইবনে হানিফ : অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিখ্যাত লিচুর হাট হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে যশোর-সদর উপজেলার বসুন্দিয়া বাজার ।

আম কাঠাল ছফেদা এবং বিভিন্ন ফলের জন্য ঢাকা-খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাবসায়ীদের কাছে বাজারটি পূর্ব পরিচিত থাকলেও বর্তমানে লিচু বেচাকেনার কারণে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে।

জানা গেছে, বসুন্দিয়া অঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ী, রাধানগর, ঘোষনগর, জামালপুর, খলিলপুর, মাহমুদপুর, আয়াপুর, দরাজহাট এবং আশপাশের গ্রাম গুলোতে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে লিচুর আবাদ হচ্ছে। বৃহৎ এই অঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিত লিচুর বেশির ভাগ বেচাবিক্রি হচ্ছে এই বাজারে। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার ও খুচরা ব্যাবসায়ীরা ক্রয় করে থাকে। হাটবার সহ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ৭/৮টি আড়তদারের মাধ্যমে এই লিচু বেচাকেনা হয়ে থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হাটটি লিচুচাষি, বাগান মালিক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে জমজমাট হয়ে উঠেছে। ঘোষনগর গ্রামের লিচু চাষি আতিয়ার রহমান, রাধানগর গ্রামের সেতু মোল্লা, হাবিবুর রহমান, হযরত আলি, সিরাজ মোল্লা, সহ ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, বর্তমানে বসুন্দিয়া বাজারে প্রতিদিন ৫০-৬০ লাখ লিচু বিক্রি হচ্ছে।

এতে হিসাব করলে এক থেকে দেড় কোটি টাকা লেনদেন হয়। তারা বলেন, এক মাসের বেশি সময় এই বাজারে প্রতিদিন লিচু বেচাবিক্রি করবেন চাষিরা। এখান থেকে লিচু কিনে খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, রংপুর ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকে ব্যাবসায়ীগণ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যশোর অঞ্চলে ৬৪৯ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। বাঘারপাড়া অঞ্চলের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, এবছর অধিকাংশ লিচু গাছে বৌল না হওয়ার কারণে অনেক বাগানে ফল শুন্য দেখা গেছে। তবুও যেসব গাছে বৌল এসেছিল সেসব গাছে ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া এবছর লিচুর দামও ভালো পাচ্ছে চাষিরা।

বাজারে রেজাউল ইসলাম (রেজা) মোল্যার আড়তের একজন কর্মচারির সাথে কথা বলে জানা যায়, এক মাসের বেশি সময় এই বাজারে প্রতিদিন লিচু বিক্রি করবেন এই অঞ্চলের চাষিরা, বসুন্দিয়া এবং বাঘারপাড়া অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের লিচুবাগানে গিয়ে দেখা গেছে, চাষিরা গাছ থেকে লিচু পাড়ছেন। পরে গণনা করে ৫০টি করে আঁটি বাঁধছেন। এরপর ঝুড়িভর্তি করে ভ্যান, ইজিবাইক ও গাড়িযোগে বসুন্দিয়া বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি ছড়ায় ৫০টি এভাবে লিচু বিক্রি হবে হাজার চুক্তিতে কিন্তু প্রতি একহাজার লিচুতে একশ, লিচু বেশি দিতে হবে ।

চাষিরা জানিয়েছেন, এবার বৈশাখ মাসে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় প্রতিটি বাগানের লিচু গাছে ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো পাচ্ছে চাষিরা । বাঘারপাড়ার ঘোষনগর-মাহমুদপুর বাজারের চায়ের স্টল গুলোতে বসলেই শোনা যায়, লিচুর বাগান মালিক ও ব্যাবসায়ীদের মুখোরোচক গল্প। এমনই এক চায়ের স্টলে বসে শোনা যায়, ঘোষনগর গ্রামের বাবুল গাজী, এবছর প্রায় ১০ লক্ষ টাকার লিচু বাগান ক্রয় করেছেন। তার বাগানে প্রতিদিন ২০/২৫ জন শ্রমিক কাজ করে এবং দিন শেষে মজুরি গ্রহণ করে। অপরজন হাফিজুর মাষ্টার তিনি ও প্রায় ৯/১০ লক্ষ টাকার লিচুর বাগান বন্ধক নিয়েছেন। বর্তমানে তার বগানেও ১৪/১৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এই গ্রামের গ্রামের সুলতান খাঁ, মোহাম্মদ মোল্লা, হাবিবুর রহমান, হয়রত আলী, সিরাজ মোল্লা সহ অনেকেই আছন যারা অন্যের বাগান লিজ অথবা বৌল আসার পর নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করে পরিচর্যা করেন। বসুন্দিয়া বাজারের আড়তদার মেসার্স বসুন্দিয়া ট্রেডার্সের মালিক মো. নবিনুর খান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে । ভালো মন্দ মিলে বর্তমানে এক হাজার লিচু “১৪০০শ, থেকে ২৪০০শ, টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় যশোর ও খুলনার আড়তে নিয়ে বিক্রি করতে হত লিচু। দুরের পথ হওয়ার কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে পোহাতে হতো বিভিন্ন দুর্ভোগ। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় বাজারে নিচু বিক্রি করতে পেরে তারা অনেক খুশি। তারা আরও বলেন, বাজারের আড়ৎ ছাড়াও বর্তমানে দুরের ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে ও লিচু ক্রয় করে ভ্যান এবং পিকআপ যোগে নিয়ে যাচ্ছেন।