যশোর অফিস : চলতি বছর যশোর বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য দেড় লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী প্রস্তুতি নিয়েছে। বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০২। তবে গতবারের তুলনায় এ বছর মোট পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ১৪ হাজার।

গত দু’বছর পাসের হার বেশি হওয়ায় এ বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ‘রেকর্ড সংখ্যক’ কমেছে। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ায় এ বছর মোট পরীক্ষার্থী কমেছে বলে মনে করছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্তভাবে আয়োজনের জন্য আগামী ২৩ মে পর্যন্ত যশোরের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। পরীক্ষাচলাকালীন কোনো কোচিং সেন্টার খোলা থাকলে কোচিং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।

যশোর শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। যশোর বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০২ জন পরীক্ষার্থী। গত বছর যশোর বোর্ডে মোট ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। গতবারের তুলনায় এ বছর মোট পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ১৪ হাজার। এ বছর অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৭৮ হাজার ৭৩১ জন ও ছাত্রী ৭৯ হাজার ৪৭১ জন। মানবিকে অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৮২৪ জন ও বিজ্ঞান বিভাগে ৩৯ হাজার ৪৪৪ জন।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ২ হাজার ৫১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নেবে। ২৯২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বোর্ডের তথ্য অনুসারে বেশি কমেছে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরীক্ষার্থী।

এবারের এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের লক্ষ্যে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। যেদিন যে বিষয়ের পরীক্ষা থাকবে, সেদিন ওই বিষয়ের সব সেট প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তারপর পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্র সচিবকে জানানো হবে, কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার হলে শুধুমাত্র কেন্দ্র সচিব সাধারণ মানের মোবাইল ফোন (বেসিক ফোন) ব্যবহার করতে পারবেন। এর বাইরে কেউ (সচিব ছাড়া) তা করতে পারবেন না। এটি কোনো কেন্দ্রে করা হলে কেন্দ্র বাতিল এবং এমপিওভুক্ষ শিক্ষক হলে তাদের এমপিও বাতিল করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবারের মতো বাড়তি সময় রাখাসহ কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোরের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবিব বলেন, গত বছর যশোর বোর্ডে এসএসসিতে দেশ সেরা রেজাল্ট করেছিলো। এর আগের বছর করোনার কারণে অটোপাশ থাকায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম। ফলে যশোর বোর্ডে সাধারণত অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী থাকে ১৫ হাজারের বেশি, সেখানে এবার মাত্র ৭৭৪ জন। সবমিলিয়ে বলা যায়, অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কম থাকায় মূলত এ বছর মোট পরীক্ষার্থী কমেছে।

তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র সচিবদের সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করেছি। গতবার একাধিক কেন্দ্রে প্রশ্ন পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সতর্ক রয়েছি। পরীক্ষা পরিচালনায় শিক্ষা বোর্ডের নিজস্ব টিম ছাড়াও ১০ জেলায় ১১টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমে সদস্য করা হয়েছে মাধ্যমিক ও কলেজশিক্ষকদের। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনেরও ভিজিলেন্স টিম থাকবে।

অপরদিকে যশোরে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কঠোর অবস্থানে রয়েছে যশোর জেলা প্রশাসন। গত ৩ এপ্রিল যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে এসএসসি, দাখিল, ভোকেশনাল পরীক্ষা নকলমুক্ত ও সুষ্ঠু পরিবেশে গ্রহণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্র সচিবদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে জেলা প্রশাসন।

সভায় জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, কেন্দ্র সচিব ছাড়া কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি কক্ষ পরিদর্শকের প্রতি এ বিষয়ে কঠোরতা রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক কক্ষ পরিদর্শক নিযুক্ত করা যাবে না। যে কক্ষে যে প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে ওই কক্ষে সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে কক্ষ পরিদর্শক নিযুক্ত করা যাবে না। এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।