আব্দুল্লাহ আল-মামুন : পবিত্র শবে কদর, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদ-উল-ফিতর-এর টানা ৫ দিনের ছুটিতে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের সমগ্র কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। এর ফলে স্থবির হয়ে পড়বে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম।

দেশের অর্থনীতিতে বেনাপোল বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ৯০ ভাগই আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। মাত্র সাত দিনের এলসিতে পণ্য আনা যায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪
কিলোমিটার। কলকাতা থেকে মাত্র আড়াই ঘন্টায় চলে আসা যায় চেকপোস্টে। সে কারণে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানির জন্য বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে থাকেন। পবিত্র শবে কদর, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদ-উল-ফিতর’র লম্বা ছুটিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পড়বে বিরুপ প্রভাব। এমনিতেই বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট লেগেই আছে। লম্বা ছুটির কারনে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাঁচামালের
সংকট দেখা দিতে পারে।

সীমান্তের দু‘পাশের ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ছুটিতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, আগামী বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে রোববার (২৩ এপ্রিল) সরকারি ছুটি ঘোষণা হলেও আগামী মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল থেকে বন্ধ হয়ে যাবে বেনাপোল-পেট্রাপোলের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। কাস্টম ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিজ নিজ বাড়িতে ঈদ করতে রওয়ানা দিবেন। তারপর সরকার ঈদের তিন দিন আগে পরে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখায় বন্দর থেকে কোনো পণ্য খালাসও হবে না। অনেক আমদানিকারক ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বাড়িতে যাবেন। তারা ঢাকা ফিরে না আসা পর্যন্ত কোন পণ্যও খালাস নিবে না।

সব মিলিয়ে ৫ দিন ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে বেনাপোল বন্দর। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে পুনরায় বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম সচল হবে বলে তিনি জানান। দু‘দেশের সিএন্ডএফ এজেন্টস ও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বিকেল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হবে। বুধবার (১৯ এপ্রিল) পবিত্র শবে কদরের ছুটি, বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি, ২১ ও
২২ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি, ২৩ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বন্ধ থাকবে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম। ২৪ এপ্রিল সোমবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি চালু হবে। এদিকে টানা ছুটির কারনে সীমান্তের দু‘পাশের বন্দরে ট্রাকজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বেনাপোলের মতোই পেট্রাপোল বন্দরেও ট্রাকজট রয়েছে। বন্দরে
স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল, পেট্রাপোল পার্কিং এ কয়েকশ’ পণ্য বোঝাই ট্রাক অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়।

বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারনে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক থাকবে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত। এ সময় একটু বেশি ভিড় হয়ে থাকে। সে কারণে ইমিগ্রেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। বেনাপোল বন্দরের
উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, ১৮ এপ্রিল বিকেল থেকে ঈদের ছুটি হয়ে যাচ্ছে। ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম ১৯ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দরে যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা দিনে রাতে বন্দর এলাকায় টহল দিবে। পাশাপাশি বেনাপোল পোর্ট থানা কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি বলা হয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে বন্দরের কর্মতৎপরতা বাড়বে।