খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ এপ্রিল ১৭, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5144 বার
সানজিদা আক্তার সান্তনা : যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে উন্নতমানের মরচুয়ারির (লাশ রাখা ফ্রিজ) ফ্রিজ সংযোজন করা হয়েছে। এক সাথে ৪টি মরদেহ সংরক্ষণ করা যাবে এ মরচুয়ারিতে। মরচুয়ারি স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি এই হাসপাতালের মর্গে সংকট কাটলো। কেউ মৃত্যুবরণ করলে স্বজনরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একহাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে মরদেহ রাখতে পারবে। এতে করে অজ্ঞাত মরদেহ সংরক্ষণসহ অন্যান্য মরদেহ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পাবে হাসপাতালের মর্গের।
যশোর জেলাসহ আশপাশের জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী সেবা নিতে আসে। অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা, খুনসহ বিভিন্ন অপঘাতে নিহত ব্যক্তিদের লাশ শনাক্ত হওয়ার জন্য মর্গে লাশ সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু হাসপাতালে ফ্রিজার না থাকায় অনেক সময় মরদেহ নষ্ট হয়ে বিভিন্ন পোকামাকড়ের কবলে পড়ে। এছাড়াও আত্মহত্যা, পুকুরে ডুবে মারা যাওয়াসহ মামলা সংক্রান্ত সকল লাশেরই ময়নাতদন্ত করতে হয়। এসব লাশ যে কোন দিন বিকালে নিয়ে এলে পরের দিন ময়নাতদন্তের কাজ করতে হতো। যথাযথভাবে লাশ সংরক্ষণ করতে না পারা ও ফ্রিজার না থাকায় ময়নাতদন্তে নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। মর্গে দীর্ঘদিন মরচুয়ারির সংকট ছিলো। মরচুয়ারি স্থাপনের মাধ্যমে সেই সংকট কেটে গেলো।
হাসপাতাল সূত্র অনুযায়ী প্রায় ১৬ বছর আগে ২০০৭ সালে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে নির্মিত হয় অত্যাধুনিক মর্গটি। কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় করে এ মর্গটি নির্মাণ করা হয়। পরে ২০০৮ সালে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে কোটি টাকা মূল্যের জাপানি মরচুয়ারি স্থাপন করা হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে মরচুয়ারিতে ৬টি র্যাক ছিলো। সেটি স্থাপনের দুই বছর পার না হতেই অকেজো হয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালের শেষের দিকে সেটি মেরামত করে। এরপর থেকে ভালো আর মন্দের মধ্যে ওই মরচুয়ারিটি চলতে থাকে। ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট মরচুয়ারিটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে মেরামত করার পরও তা আর ঠিক হয়নি। মরচুয়ারি অচল থাকায় যশোর অঞ্চলের মানুষ তাদের মৃত স্বজনদের মরদেহ সংরক্ষণ করতে পারছিলেন না। বিদেশে থাকা ছেলে-মেয়ের অনুপস্থিতিতেই তার প্রিয় স্বজনকে দাফন বা সৎকার করতে হতো।
সশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মরচুয়ারি বিকল থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত পরিচয় মরদেহ নিয়ে বিপাকে ছিলেন। মরচুয়ারিতে সংরক্ষণ করতে না পারায় অনেক মৃতদেহ পচে গলে নষ্ট হয়ে যেতো। নতুবা তড়িঘড়ি করে দাফনের ব্যবস্থা করতে হতো। আবার গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির মৃতদেহ ‘ফ্রিজাপ’ করে রাখা সম্ভব হতো না। নতুন মরচুয়ারি স্থাপন করায় যশোরবাসীসহ আশেপাশের জেলার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এখন থেকে অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহগুলো তড়িঘড়ি করে আর দাফন করতে হবে না। স্বজনদের আবেদনে অজ্ঞাত মৃতদেহ মরচুয়ারিতে কিছু দিন সংরক্ষণ করা যাবে।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ জানান, মর্গে মরদেহ রাখার জন্য ফ্রিজার না থাকায় নানা রকমের সমস্যার সৃষ্টি হতো। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের অধিক টাকা ব্যয়ে লাশবাহী বেসরকারি ফ্রিজিং গাড়ি ভাড়া করতে হতো। সরকারিভাবে হাসপাতালের মর্গে ৪টি মরদেহ রাখার ফ্রিজার স্থাপন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় হাসপাতাল মর্গে মরদেহ সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজারের ব্যবস্থা হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে স্বস্তি এসেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন-অর-রশীদ জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বরাদ্দ পাওয়া মরচুয়ারিটি খুবই উন্নতমানের। গত ৪ এপ্রিল মরচুয়ারিটি লাশ ঘরে ইনস্টল (স্থাপন) করা হয় এবং ১৩ এপ্রিল স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং হাসপাতালের পরিচালক কমিটির সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য্য (এমপি) হাসাতালের মর্গের উন্নতমানের এ মরচুয়ারির উদ্বোধন করেন। এ মরচুয়ারির মেশিনের বক্সে মাইনাস ডিগ্রি তাপমাত্রায় এক সাথে ৪টি মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যাবে।#