আশরাফুজ্জামান বাবু, স্টাফ রিপোর্টার : ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক রোগীর সাথে অবস্থান করা স্বজন মৌমাছির কামড়ে মৃত্যু বরণ করেছে। নিহতের নাম আকাশ (২৭)। তিনি ঝিকরগাছা ইউনিয়নের পায়রাডাঙা গ্রামের জাকির হোসেনের বড় ছেলে। এ ঘটনায় উক্ত এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহত আকাশের ছোট ভাই রাহুল (২২) জানান, তার ভাই পেশায় একজন ভ্যানচালক। আকাশের সন্তান সম্ভবা স্ত্রী পিংকি খাতুন (২০) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত রবিবার তাকে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদিন রাতে আকাশ হাসপাতালে তার স্ত্রীর কাছেই অবস্থান করছিলো। ঘটনার দিন ফজরের নামাজের সময় তাকে মৌমাছি কামড়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ছটফট করতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স জরুরি বিভাগের ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসে। ডাক্তার তার শরীরে দুটো ইনজেকশন পুশ করে। এরপরই মুখ দিয়ে গ্যাজা বের হয়ে আকাশের দেহ নিথর হয়ে যায়। রাহুল আরও বলেন, হাসপাতাল থেকে ভাবীর ফোন পেয়ে সে আর তার মা দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দ্যাখেন তার ভাই নিথর হয়ে পড়ে আছে। মারা গেছে নাকি বেচে আছে এর উত্তর না দিয়ে ডাক্তাররা তার ভাইকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। এই অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

লাশের দাফনে অংশ নেওয়া শিমুল হোসেন বলেন, আকাশের কপালে এবং বাহুতে ছোট তিনটা কালো দাগ ছিলো। মাত্র ৩টা মৌমাছির কামড়ে মৃত্যু হয়েছে এটা কেউ বিশ্বাস করতে চাইছে না। স্বজনদের ধারণা অন্য কোনো কারণে বা ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে আকাশের মৃত্যু হতে পারে।

ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রশিদুল আলম বলেন, মৌমাছির কামড়ের ফলে ঐ রোগীর প্রেশার অনেক কমে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, মুখ দিয়ে ফ্যানা বের হতে থাকে। মেডিকেলের ভাষায় একে Anaphylaxis shock বলে। এর একমাত্র ঔষধ হলো Hydrocortison ইনজেকশন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ঐ ইনজেকশন প্রদান করেন কিন্তু রোগীর কোন উন্নতি না হওয়ায় ২৫০ বেড জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে রোগীটি উক্ত হাসপাতালে মারা যান।

এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ১৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান ও গর্ভের সন্তানকে নিয়ে আকাশের স্ত্রী এবং তার পরিবার এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।