জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ মার্চ ৯, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 5494 বার
ঢাকা অফিস : গত তিন দিনের ব্যবধানে পরপর রাজধানীতে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনা নাশকতা কি না তা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ দুই ঘটনা নাশকতা নয় বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা বলছেন, জমে থাকা গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ বলে এসব ঘটনায় উদ্ধার হওয়া মরদেহের ধরনসহ প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে তিতাস গ্যাস কৃর্তপক্ষ। তারা বলছেন, বিস্ফোরণে গ্যাসের কোনো আলামত নেই।
তবে এসব বিস্ফোরণ খতিয়ে দেখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের আপাতত যুক্ত করার সিদ্ধান্ত সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এদিকে বিস্ফোরণ-আগুনে সায়েন্সল্যাব এবং সিদ্দিকবাজারে মোট ২৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার নিশ্চিত কারণ এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করতে না পারলেও জনমনে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে গত ২৪ জানুয়ারি মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় পরিত্যক্ত ড্রামে বিস্ফোরণ এবং গত তিন দিনের ব্যবধানে রাজধানীর মিরপুর রোডের সায়েন্সল্যাব এবং গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজার এলাকায় পৃথক ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা এক সুতোয় গাঁথা কিনা তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে সায়েন্সল্যাবের ঘটনার মতো সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণ ‘জমে থাকা গ্যাস থেকে’ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলে বলেছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী। তিনি ওই ভবনে গ্যাস জমার সম্ভাব্য পাঁচটি কারণের কথাও উল্লেখ করেন।
তবে গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে তিতাস গ্যাস কৃর্তপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (অপারেশন্স) প্রকৌশলী সেলিম মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘বিধ্বস্ত ভবনে একটি রাইজার পাওয়া গেছে, কিন্তু সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যদি গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটত, তাহলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটত।’
সিদ্দিক বাজারের এ বিস্ফোরণ কোনো নাশকতা নয় দাবি করে এডিসি রহমত উল্লাহ বলেন, ‘কোনো বিস্ফোরক বা আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) সার্কিটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কোনো বিস্ফোরক ব্যবহার হলে ধোঁয়ার সময় কোনো রঙিন বা কালো ধোঁয়া হয়। কিন্তু সেখানে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া কোনো লাশের আঘাতের ধরনও বলছে এটি গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হয়েছে।’
দগ্ধ ব্যক্তিদের আহত হওয়ার ধরন দেখে মনে হয়েছে, গ্যাসের স্তরটি তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় ছিল, যোগ করেন এডিসি। বলেন, ‘এতে মনে হয়েছে এই বিস্ফোরণ মিথেন গ্যাস থেকে হয়েছে।’
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গুলিস্তান সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২০ জনের মৃরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১০জন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটগুলোর সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
অন্যদিকে সিদ্দিক বাজারের ঘটনা নাশকতা কিনা সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনা তদন্তে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে সেনাবাহিনী, র্যাব ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। এছাড়া ওই বিধ্বস্ত ভবনের বেজমেন্টে জমে থাকা পানি গতকাল পরীক্ষা করতে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)।
এ বিষয়ে বিএসটিআই উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এই পানি পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ বা অন্য কোনো ধরনের বিস্ফোরক জাতীয় কিছু পাওয়া যায় কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।’
সিদ্দিকবাজার বিস্ফোরণের সম্ভাব্য পাঁচ কারণ
রাজধানীর গুলিস্তানের বিআরটিসি বাস কাউন্টারের দক্ষিণ পাশে সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে কীভাবে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটি এখনো খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ভবনটি পরিদর্শন করে বলেছে, ভবনের বেজমেন্টে বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে।
তবে ভবনের ধ্বংসস্তূপ, আহত ও নিহত হওয়ার ধরন দেখে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলটি মনে করছে, ভবনের বেজমেন্টের বদ্ধ কোনো কক্ষে গ্যাস জমে সেটি ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছিল। সেখানে যেকোনো উপায়ে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পাঁচটি উপায়ে গ্যাস জমতে পারে বলে মনে করছে তারা।
সম্ভাব্য পাঁচটি কারণ হচ্ছে- ভবনের মাটির নিচে পানির ট্যাংক থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে; দুটি ভবনের মাঝখানে একটি সেপটিক ট্যাংক ছিল, সেখান থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে; বিচ্ছিন্ন হওয়া কোনো গ্যাসের লাইন থেকে গ্যাস জমতে পারে বা দেয়ালে মিথেন গ্যাস জমে থাকতে পারে; পয়োনিষ্কাশন লাইনের পাইপ লিকেজ হয়ে গ্যাস জমতে পারে এবং ভবনে থাকা বড় জেনারেটর থেকেও কোনোভাবে গ্যাস জমতে পারে।
সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, যেকোনো উপায়েই হোক ভবনের আবদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমেছিল। সেখানে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট বা অন্য কোনো উপায়ে স্পার্ক থেকে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাত তলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনের দুই পাশে আরও দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ২০ জন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আর রাজধানীর মিরপুর রোডের সায়েন্সল্যাব এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে গত রবিবার। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়।