জেলার খবর, ঢাকা বিভাগ, ফরিদপুর | তারিখঃ জানুয়ারি ১০, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1979 বার
সনত চক্র বর্ত্তী: আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমউদ্দিন ছোট্র বাড়ি রসুলপুরে যাও’ পল্লীকবি জসীম উদ্দীন’র বিখ্যাত এই কবিতা আমরা সবাই পড়েছি। কবিতার মতো আসমানী না হলেও কাছাকাছি একজনের সাথে দেখা হলো ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বুড়াইচ ১ নং ওর্য়াডে।
তার নাম ছালেহা বেগম(৮২)। প্রায় ২৭বছর আগে স্বামী আব্দুল ওদুদ খোন্দকার মারা যায়।নিজের বসত ভূমি বলতে কিছু নেই।সেই থেকে অন্যের বাড়ি কাজ করে, চেয়ে চিন্তে খেয়ে না খেয়ে অন্যের জায়গায় ছোট একটি ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন স্বামী হারা ছালেহা বেগম ।
ছালেহা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘শুনেছি সরকার কত মানুষ গরিবগেরে সাহায্য দেয়। কিন্তু আমাগের কেউ খবরও নেয় না।বেশ কয়েক বছর আগে বুড়াইচ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মেম্বার আউয়াল ফকির আমাকে একটা বিধবা ভাতা করে দিছে এই টুকু। সরকার নাকি কত ঘর দিচ্ছে, আমাগেরে একটা ঘর দিলে মাথা গুজার জায়গা হতো। পরের জায়গায় থেকে মানবতার জীবন যাপন করছি। আমিও কোন দিন খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। শান্তিতে ঘুমোতে পারি না। আমাগের এই ভাঙ্গা ছোট ঘরে সবাই খুব কষ্টে থাকি।
সরেজমিনে ছালেহা বেগমের বুড়াইচের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উপরে ভাঙ্গা টিনের ছাওনি, ভাঙ্গা টিনের বেড়া এবং মাটির ঘরের মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। এরকম একটি কুড়ে ঘরে বসবাস করছেন ছালেহা বেগম।
এ প্রতিবেদককে তিনি জানান,আমি নিঃসন্তান প্রায় ২৭বছর স্বামী আব্দুল ওদুদ খোন্দকার মারা গেছেন।স্বামী মারা যাওয়া পর থেকে অসহায় হয়ে পড়ি। স্বামী আব্দুল ওদুদ খোন্দকার মোঃ প্রফেসার মোক্তার হোসেন মিয়ার কাছে জমি বিক্রি করেছে। সেই জমিতে কোন রকম ঘর তৈরি করে থাকছি । রান্না করার শক্তি নেই, রোগ শোক আকড়ে ধরেছে। প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকার ওষুধ খেতে হয়। সারা দিন বিছানায় পরে থাকি। দু:চিন্তা কুড়ে কুড়ে খায়। ঘর মালিক যদি ঘর থেকে নামিয়ে দেয় তাহলে রাস্তায় পরে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা। শীতের রাতে পুড়ন কাপর দিয়ে দরজা জানালা ঘিরে রাখি। ভাবছি এবার ঝড়ের মধ্যে বেচে থাকতে পারবো কিনা জানিনা। এতো কষ্ট এই বয়সে সহ্য হয় না। তাই আল্লাহ পাক নিয়ে গেলে বেচে যাতাম। সারা জীবনে একটু সুখের মুখ দেখলাম না।জমিজমা না থাকায় সংসারার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় ছালেহা বেগম । অন্যের বাড়ি কাজ না পেলে অনাহারে থাকতে হয়।
আলফাডাঙ্গা (বুড়াইচ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি) আউয়াল ফকির বলেন,আমি যখন ইউনিয়নের মেম্বার ছিলাম তখন ছালেহা বেগমকে একটা বিধবা ভাতা করে দিয়েছিলাম।আমি সুযোগ পেল ছালেহা বেগম পাশে থেকে উপকার করার চেষ্টা করবো।
আলফাডাঙ্গা পৌর মেয়র আলী আকসাদ ঝন্টু বলেন, জমিজমা নেই এরকম ভূমিহীন হতদরিদ্র মানুষের জন্যই সরকার ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হবে, যদি সে ভু’মিহীন হয় তাহলে খাস জমিতে তাকে ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।