মনিরামপুর অফিস : বিদায়ী বছরের শেষ মাসে কাভার্ড ভ্যান চাপায় পিতা-পুত্রসহ ৫ জনের প্রাণহানি ও গাছের সাথে সংঘর্ষে দুই ভাইয়ের প্রাণহানির ঘটনা ছিল আলোচিত। বছর জুড়ে ১শ’৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২৭ জনের প্রাণহানি ও ৩জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডের কিএম কণ্টেইনারে অগ্নিদগ্ধ ফায়ার সার্ভিস কর্মী গাউসুল আজমের মৃত্যু সবার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর রাজারহাট-চুকনগর মহাসড়কের বেগারিতলায় কাভার্ড ভ্যান দোকানে ঢুকে পড়ে। এতে কাভাডর্ ভ্যান চাপায় ঘটনাস্থলে হোটেলে পরোটা খেতে আসা পিতা হাবিবুর রহমান(৪৮) ও তার শিশুপুত্র তাওহীদ হাবিব তাওসীসহ (৭) টুনিয়াঘরা গ্রামের মীর বাবুর ছেলে তৌহিদুল ইসলাম (৩৮), মীর রফিজ উদ্দীনের ছেলে শামছুর রহমান (৫৮) এবং উপজেলার জয়পুর গ্রামের আব্দুল মোমিনের ছেলে জিয়াউর রহমান (৪০) প্রাণ হারান। গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে ফুফু বাড়ি থেকে ফেরার পথে গাছের সাথে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে মাছনা গ্রামের মুফতি ইসমাইল হোসেনের ছেলে নাহিদ আতাউল্লাহ (২২) ও তার মামাতো ভাই মোহনপুর গ্রামের মোস্তাক হোসেনের ছেলে শিহাব হোসেন (১৭) নিহত হয়।

গত ৬ ডিসেম্বর মোটরসাইকেল আরোহী মাঝিয়ালী গ্রামের আব্দুল হালিমের পুত্র ফুল ব্যবসায়ী রোজউল ইসলাম (৩৮), গত ১৬ অক্টোবর পিকআপের ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে মোহনপুর গ্রামের আব্দুল বারির স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৪০), ১২ অক্টোবর মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্র তারেক হোসেন (১২), ৯ সেপ্টেম্বর ট্রলির ধাক্কায় বাইসাইকেল চালক কোমলপুর গ্রামের গোবিন্দ মিস্ত্রী (৩৫), ১৯ আগস্ট ফুলতলা উপজেলার দামুদার গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন তালুকদারের ছেলে মুত্তাকিন হৃত্বিক (২২) এবং তার বোন এনামুল ইসলামের স্ত্রী বন্যা চৌধুরী (২৪), ২ আগস্ট ট্রাক চাপায় হরমুজ মল্লিক (৩০), ২৪ জুলাই রাজগঞ্জে ট্রাক চাপায় চৌগাছার মাশিলা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে তন্ময় ইসলাম অপু (২৭), ১৯ জুন ঢাকুরিয়া বাজারে আব্দুস সালামের স্ত্রী আবেদা খানম (৫৫), ২৪ জুন রাজগঞ্জ সড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় চৌগাছার আনোয়ারুল ইসলাম (৩৪), মধুপুর গ্রামের হায়দার দফাদারের ছেলে রাসেল কবির (৩২), ২৪ মে রাজগঞ্জের জামতলায় ট্রাক চাপায় ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার গাইঘাটা গ্রামের নিরঞ্জন দাসের ছেলে সৌমেন দাস (১৫), ১০ এপ্রিল ট্রাকের ধাক্কায় চালকিডাঙ্গা গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী ফুরজান বিবি (৮৩), ৩০ মার্চ ট্রলির ধাক্কায় হেলাঞ্চি গ্রামের মকলেছুর রহমান সরদারের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৫৬), ১৩ মার্চ বন্ধুর বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে গাছের সাথে সংঘর্ষে দুই বন্ধু চাকলা গ্রামের কাশেম গাজীর ছেলে ইমরান হোসেন (২০) ও একই গ্রামের এরশাদ আলীর ছেলে শাওন হোসেন (২১), ২১ ফেব্রয়ারি রাজগঞ্জ সড়কে ঝিকরগাছা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা খোসালনগর গ্রামের দাউদ আলী (৩০), ১৬ ফেব্রয়ারি আটমাইল নামক স্থানে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের কচুয়া গ্রামের শাহাজাহার আলীর ছেলে গাছ কাটা শ্রমিক আব্দুল হান্নান (৩৮), ১৮ ফেব্রয়ারি নেহালপুর সড়কের সাতগাতি এলাকায় মোরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ইটবাহী ট্রলির সাথে সংঘর্ষে বাহিরঘরিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দীনের ছেলে রাসেল হোসেন (১৬) ও একই গ্রামের তবিবুর রহমানের ছেলে রনি হোসেন (১৭) নিহত হন।

এছাড়া ৪ জুন চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কন্টেইনারে অগ্নিকান্ডে উদ্ধার কাজে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিস কর্মী উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের আজগর আলীর একমাত্র ছেলে গাউসুল আজম (২৪)। তিনি বিস্ফোরণে দগ্ধ হন। ৮ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সবাইকে কাঁিদয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

মণিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা প্রণব কুমার বিশ্বাস জানান, তাদের রেকর্ড অনুযায়ী বিদায়ী বছরে উপজেলায় ১শ’৬৯টি দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে ৯ জন নিহতসহ ২শ’৭৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৮ জন পুরুষ ও ১ জন নারী রয়েছেন। এছাড়া আহতদের মধ্যে ২শ’৪২ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী রয়েছেন। তিনি আরও জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর তাদেরকে সব খবর দেয়া হয় না। যে কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হবে।