আশরাফুজ্জামান বাবু : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের মৃত মোরশেদ আলীর স্ত্রী আমেনা বেগমের বিরুদ্ধে স্বামীর নাম জালিয়াতি করে অন্য মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। আমেনা বেগমের সন্তান বিল্লাল হোসেন সেই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, ঝিকরগাছা কমিটির সভাপতি। আদৌও তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নন এবং তার মাতাও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নন।অথচ তারা আরেকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে ২০১৩ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছে।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকায় ৪৭৭৫৩ নং এ নাম আছে মোঃ তারা চাঁদ মন্ডলের পুত্র মোঃ মশিয়র রহমানের। যার বেসামরিক গেজেট নং ১৬৪৫। ঝিকরগাছার পানিসারা কুলিয়া গ্রামের আমেনা বেগমের স্বামী মোরশেদ আলীর পিতার নামও তারা চাঁদ মন্ডল। এই তারা চাদ মন্ডলকে পুঁজি করে আমেনা বেগম তার এন আই ডি কার্ডে স্বামীর নাম মোরশেদ মুছে সেখানে মৃত মশিয়ার রহমান লিখে মশিয়র রহমানের ওয়ারেশ সেজে ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দ সরকারি ভাতা উত্তোলন করে নিচ্ছেন। তার বড় ছেলে বিল্লাল হোসেন নিজের আইডি কার্ডে পিতার নাম মোর্শেদ মুছে মৃত মশিয়ার রহমান বানিয়ে নিয়ে হয়েছেন ঝিকরগাছা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের সভাপতি।
আমেনা বেগম, যার আই ডি নং ১৯৬২৪১১২৩৭১৮৬৮৭০২ তে সার্চ করে দেখা যায় সরকারি তথ্য ভান্ডারে তার স্বামীর নাম আছে মোরশেদ আলী। অথচ তিনি ব্যাংকে একাউন্ট করার সময় যে এন আই ডির ফটোকপি জমা দিয়েছেন তাতে তার স্বামীর নাম লেখা আছে মৃত মশিয়ার রহমান। অনুরূপ ভাবে বিল্লাল হেসেন, যার আইডি নং ১৯৮২৪১১২৩৭১৯২০৮৬৩ এ সার্চ করে দেখা যায় সরকারি তথ্য ভান্ডারে তার পিতার নাম আছে মোরশেদ আলী। কিন্তু তার মায়ের একাউন্ট করার সময় নমিনি হতে তিনি যে এন আই ডির ফটোকপি দিয়েছেন তাতে তার পিতার নাম লেখা আছে মৃত মশিয়ার রহমান।

এ বিষয়ে জানতে আমেনা বেগমের গ্রামের বাড়ি কুলিয়া গেলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামীর নাম মশিয়ার আর লোকে ডাকতো মোর্শেদ বলে। মশিয়ার নামে কোনো ডকুমেন্টস তিনি দেখাতে পারেননি। বললেন, এ বিষয়ে সব আমার ছেলে বিল্লাল জানে। গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, কোনো কাগজেই মশিয়ার নেই। তার সব কাগজে মোরশেদ লেখা আছে। তবে নাম সংশোধন এর প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে মোরশেদ মশিয়ার হয়ে যাবে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের খুলনা বিভাগীয় সম্পাদক শাওন রেজা খোকা বলেন, কাগজ পত্র অনুযায়ী বিল্লাল হোসেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নন সেটাতো বাস্তবে দেখছি। আমরা তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করবো।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, আমি বিষয়টি দেখলাম। অভিযোগ আকারে পেলে তাদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তারা আসলেই মুক্তিযোদ্ধা মশিয়র রহমানের ওয়ারেশ। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কুলিয়া গ্রামের অনেক প্রবীণ ব্যাক্তি জানান, আমরা জানি বিল্লালের বাপের নাম মোর্শেদ। তাকে আমরা পোড়া মোর্শেদ বলে ডাকতাম। তার নাম মশিয়র এটা আমরা কখনও শুনিনি। সে বেচে থাকতেও কোনোদিন আমাদেরকে বলেনি সে মুক্তিযোদ্ধা ছিল। মোরশেদ মারা যাওয়ার অনেক পরে তার ছেলে বিল্লালের কাছে শুনি যে তার বাপ মুক্তিযোদ্ধা ছিলো। কিন্থ বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় কেউ কোনো মন্তব্য করিনি।
এদিকে সাংবাদিকরা এই বিষয়টি প্রকাশ করতে চলেছে শুনে ধুরন্ধর বিল্লাল হোসেন বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন তার এবং তার মায়ের আই ডি কার্ডে পিতা ও স্বামীর নাম পরিবর্তন করার জন্য। ইতিমধ্যে তিনি ঝিকরগাছার একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে দেড় লক্ষ টাকার চুক্তিও করেছেন এন আই ডি সংশোধনের জন্য বলে শোনা যাচ্ছে।