আশরাফুজ্জামান বাবু : যশোরের ঝিকরগাছার পানিসারা ইউনিয়নের রঘুনাথনগরে অবস্থিত বাবরআলী সরদার বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত শিক্ষক শিক্ষিকা উপস্থিত থাকলেও নেই কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। তবে প্রতিষ্ঠানে কোন প্রকার অনুষ্ঠান হলে সেই দিন শিক্ষার্থী বসানোরও স্থান খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে থাকে বলে এলাকায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

খাতা-কলমে বাবরআলী সরদার বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ৪শ ৭০জন শিক্ষার্থী নিয়ে সপ্তাহে রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় বেশ কিছু সংবাদকর্মীরা বিদ্যালয়ের বিষয়ে খোঁজ-খবরের জন্য প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হলে অধিকাংশ শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে দেখে খুশি হলেও বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীরও উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ২৬জন শিক্ষকের মধ্যে ২৪ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। যদিও প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোছাঃ রেহেনা খাতুন বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলা সহ পাশ্ববর্তী শার্শা ও মনিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঐতিহ্যবহনকারী বিদ্যাপীঠ হল বাবরআলী সরদার বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। প্রতিনিয়ত ৯০-১০০জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলে প্রতিষ্ঠান। আজ ও কাল আমাদের বন্ধ। বন্ধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাচ্চা কালেকশনের জন্য আমাদের সংরক্ষিত ছুটি। ছুটির নোটিশ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো নোটিশ খাতা দেখাতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীর চাপে বসানোর স্থানও খুঁজে পাওয়া যায় না এই সম্পর্কে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেন নি। বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক ও অধ্যায়ন রত শিক্ষার্থীদের তালিকা এবং হাজিরা খাতা দেখতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি অফিস থেকে নিয়ে দিচ্ছি। পরবর্তীতে তিনি অফিসে গিয়ে বলেন, আমাদের সব ডকুমেন্টস সভাপতির নিকট রয়েছে। সভাপতি তালাবদ্ধ করে রেখেছেন।

প্রধান শিক্ষক মোঃ মহিতুল রহমান বলেন, বোঝেন তো এটা বেসরকারি স্কুল। ম্যানেজিং কমিটি যেটা বলে আমাদের সেই অনুয়ায়ী চলতে হয়।

সভাপতি মোঃ আব্দুল আলিম বলেন, ছেলেপিলে আনতি পাঁচখান গাড়ি, সরকারি কি কোনো টাকা দেয় ডিজেল কিনতি ? আপনারা লেখালেখি করেন দিন যেনো সরকার আমাদের খরজের টাকা দেয় না কেনো ? ডিজেল কেনার টাকা নেই, দেড়শ টাকা লিটার, পাঁচটা গাড়ির ডিজেল কিনতে হয়, কালকে অডিট হওয়ার পরে শিক্ষকরা ছুটিতে ছিলো। আমারে বলেছিলো। তা আমি বলে ছিলাম, আচ্ছা দরকার নেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তালিকা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আপনার কট্টিক তালিকা লাগবে? আমি যশোরে আছি ঝিকরগাছায় এসে আপনাকে দিচ্ছি।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে, প্রতিষ্ঠানটির নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা থেকে অনুদান নিয়ে আত্মসাৎ করছে। নিয়োগের সাথে সাথে বিশাল বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এখানে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন বেতন না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে সেই শিক্ষক চাকরি ছেড়ে চলে গেলে পদ শুন্য দেখিয়ে আবারও ঐ পদে একজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এই শিক্ষকের কাছথেকে টাকা নিয়ে পূর্বের শিক্ষককে কিছু কমবেশী করে টাকা দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়।

স্হানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধুমাত্র স্কুলের অনুষ্ঠানের দিনই প্রতিবন্ধী শিশুদের ঢল নামানো হয়, বাকী সময় গুলোতে দু’চার জন শিশু আসা যাওয়া করে।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মেজবাহ উদ্দীন বলেন, প্রতিষ্ঠানটির এখনও কোনো স্বীকৃতি নেই। তবে প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করা দরকার ছিলো বলে আমি মনে করি।