আশরাফুজ্জামান বাবু, ঝিকরগাছা প্রতিনিধি : যশোরের ঝিকরগাছা রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারির দায়ে অভিযুক্ত ইমদাদুল আবারও স্টেশনে যাতায়াত করছে। ১৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় ইমদাদুলকে স্টেশনের টিকিট বুকিং সহকারী এস এম শাহেদের সাথে মাস্টারের কক্ষে বসে আড্ডা দিতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল কর্তৃক পরিচালিত ঝিকরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজের দাবিতে স্থানীয় অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবা’র উদ্যোগে যশোর জেলার সর্বস্তরের মানুষ রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন করেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জনতার দাবিকে আমলে নিয়ে ঝিকরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে স্টপেজ এবং ৫৫টি সিট বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে করোনার পর সিট সংখ্যা কমিয়ে ৪০টি করা হয়, যার ২০টি অনলাইন এবং ২০টি স্টেশন থেকে সরবরাহ করা হয়।

স্টেশনে মাত্র ২০টি সিট বরাদ্দ থাকায় এই টিকেট পাওয়ার জন্য এতদাঞ্চলের মানুষ আরামদায়ক ভ্রমনের আশায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। আর এই সুযোগটিই গ্রহন করে একটি অসাধু চক্র। তারা খুব কৌশলে ট্রেনের টিকেট গুলো নিজেরা সংগ্রহ করে নেয় এবং সুযোগ বুঝে যাত্রীদের কাছে ২/৩ গুন দামে বিক্রয় করে। সেই চক্রের মুল হোতা হিসেবে তখনকার বুকিং সহকারী মেহেদী হাসান জেমস এবং তার নিয়োগকৃত এই ইমদাদুলের নাম উঠে আসে। তখন ইমদাদুলের নিকট তিনি কে, তিনি স্টেশনে কি করছে এবং তিনি রেল স্টেশনের সরকারি কোন কর্মকর্তা কি না জানতে চাওয়া হলে, সে জানিয়েছিল টিকেট বুকিং সহকারী মেহেদী হাসান জেমস তাকে ব্যক্তিগত ভাবে নিয়োগ দিয়েছে এবং তার বেতন দেয় টিকিট বুকিং সহকারী নিজে। যার জন্য সে রেলওয়ে স্টেশন তদারকির দায়িত্ব পালন করছে। তিনি সরকারের কোনো কর্মচারী নন, নেই কোনো নিয়োগপত্র, রেলওয়ে দপ্তরের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই, পেশায় ছিলেন দর্জি অথচ তার হাতেই ছিল রেলওয়ে স্টেশনের চাবি। টিকিট বুকিং সহকারী মেহেদী হাসান জেমস কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পরই তার কপাল খুলে যায়।

এই বিষয় নিয়ে জাতীয়, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন প্রিন্ট মিডিয়াতে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় গত ১ জুন বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) স্বাক্ষরিত একটি দাপ্তরিক চিঠির মাধ্যমে রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট বুকিং সহকারী মেহেদী হাসান জেমসকে রাজশাহী বিভাগের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর স্টেশনে বদলি করা হয় এবং ইমদাদুলকে স্টেশনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তখন রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার নিগার সুলতানা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। বর্তমানে ছুটি শেষে চাকরীতে যোগদান করার পর তিনি আবারও ইমদাদুলকে স্টেশনে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছেন। ইমদাদুলের কারণে এলাকার রেল যাত্রীদের চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উপর আস্থা উঠে যাচ্ছে। তাকে স্টেশনে দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

ইমদাদুলের নিকট স্টেশনে আসার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, স্টেশন মাস্টার নিগার সুলতানা সব জানেন।

রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার নিগার সুলতানা বলেন, সে অফিসিয়াল ভাবে স্টেশনের কোনো কাজ করে না। আমার ছোট ছোট দুটি বাচ্চা আছে। এদেরকে নিয়ে ডিউটি করতে সমস্যা হয় তাই আমাকে সহযোগিতা করতে পারসোনাল ভাবে তাকে রেখেছি। ইমদাদুল টিকিট কালোবাজারীর সাথে জড়িত থাকায় তাকে স্টেশনে আসায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল সেটা জানার পরও কেনো তাকে কাজে নেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এদিকে ইমদাদুল স্টেশনে ফিরে আসায় আবারও টিকিট কালোবাজারির আশংকা করছেন নিয়মিত যাত্রীরা। তারা অবিলম্বে এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।