যশোর অফিস : নজরুল ইসলাম নামে এক গ্রাম ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় যশোরের মণিরামপুরে ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর হাতে পঁচন ধরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সে উপজেলার রোহিতা গ্রামের আমিনুর রহমানের কন্যা এবং রোহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। হাতে পঁচনের কারণে বর্তমানে ওই শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি ঘটছে। অভিযুক্ত গ্রাম্য ডাক্তারের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন শিক্ষার্থী পিতা মো. আমিনুর। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই যশোরকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে।

মামলার বিবরণ ও অসুস্থ ছাত্রীর পিতা জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলা রোহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিজ বাড়িতে পা পিছলে পড়ে যায়। এতে মেয়েটির বাম হাতের কনুইতে কিছুটা চোট পায়। এ সময়ে তাকে রোহিতা বাজারের গ্রাম্য ডাক্তার নজরুল ইসলামের কাছে নিয়ে যায়। নজরুল নিজেকে বহু রোগের চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে রোহিতা বাজারে মেসার্স নাজমুল হাসান ফার্মেসি সাইন বোর্ড সম্বলিত একটি ওষুধের দোকান দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। সে নিজেকে (আর,এম,পি) ব্লু স্টার (ইউএসএআইডি)-এর চিকিৎসক হিসেবে দাবি করে। তিনি ওই শিক্ষার্থীর হাতের কনুইয়ের সামান্য সমস্যার কথা জেনেও এবং অর্থোপেডিকের চিকিৎসা সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা সত্বেও কোনো এক্সেরে না করেই তিনি মেয়েটির সম্পূর্ণ হাত প্লাস্টার করে দেন। প্লাস্টার করার পূর্বে তিনি মেয়েটির শরীরে ইঞ্জেকশন পুশসহ সমস্ত হাতে বিভিন্ন রকমের তরল জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ করেন এবং খাবার ওষুধের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেন। প্রেসক্রিপশনের ওষুধ গুলো তার দোকান থেকেই ক্রয় করতে হয়। এভাবে চিকিৎসা চলতে থাকায় ৬/৭দিন পর মেয়েটির হাত জ্বালাপোড়া করতে থাকে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর অসুস্থ মেয়েটিকে নিয়ে তার পিতা যশোর নোভা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ডাঃ গোলাম রসুলের কাছে যায়। সেখানে তার একবার এক্সেরে করানো হয়। চিকিৎসক এক্সে-রে প্লেট ও রিপোর্ট দেখে বলেন যে আদৌ মেয়েটির হাতের কোনো সমস্য হয়নি এবং কোনো হাড় ভাঙ্গেনি। মেয়েটির হাতের প্লাস্টার খুলে দেখা যায় তাতে পঁচনসহ সমস্ত চামড়া পুড়ে গেছে এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এরপর মেয়েটিকে যথাযথ চিকিৎসার জন্য যশোর সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ বাবুল কিশোর বিশ্বাসের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে।

এহেন ভুল চিকিৎসার জন্য বিচার দাবি করে অসুস্থ মেয়েটির পিতা গত ৯ নভেম্বর গ্রাম্য ডাক্তার নজরুল ইসলামকে বিবাদী করে যশোর আদালতে একটি মামলা করেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী বশির আহমেদ খান বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ২৮ ও ২৯ ধারায় ৩৩৬/৩৩৮ দণ্ডবিধি মোতাবেক যশোর আদালতে অসুস্থ মেয়েটির পিতা আমিনুর মামলা করেছেন। আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসু মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত গ্রাম্য ডাক্তার নজরুল ইসলাম বলেন, আমি গত ৩০ বছর যাবৎ এ এলাকার মানুষদের চিৎিসাসেবা দিয়ে আসছি। যদি আমার চিকিৎসাসেবা ভুল হতো তাহলে এতদিন এ এলাকায় কিভাবে টিকে রইলাম? আমি সঠিক চিকিৎসা দিয়েছি তাদের পরিবারের গাফিলতির কারণেই মেয়েটির হাতের পঁচন ধরেছে। এতে আমার কোনো দায় নেই। মামলার বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আমিও শুনেছি মামলা করেছেন। আশাকরি আদালত সঠিক বিচার করবেন।