সানজিদা আক্তার সান্তনা : রোগীর চাপে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু কর্ণার’ চালু করা হয়েছে। আক্রান্তদের বিশেষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের নির্দেশে এই কর্ণার চালু করা হয়। সেখানে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা রেখে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ‘ডেঙ্গু কর্ণারে’ আক্রান্ত ২০ নারী-পুরুষ চিকিৎসাধীন। এদিকে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫৪ জন। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। এবারও অভয়নগর উপজেলায় সব চেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ জানান, হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে আলাদা ইউনিটে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছিলো। কিন্তু প্রতিদিন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার রোগীর এখানে ভর্তি হচ্ছেন। মেডিসিন ওয়ার্ডে এমনিতেই অন্য রোগীর চাপ রয়েছে। তারপরেও ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশে আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য ডেঙ্গু কর্ণার চালু করা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সেখানে ২০ টি শয্যা বসানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, ডেঙ্গু কর্ণারে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি চিকিৎসক সেবিকাদের যথেষ্ট আন্তরিকা রয়েছে। সঠিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণে ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরছেন। খুুশির খবর হলো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোন রোগী মারা যাননি। আক্রান্তদের বিশেষ চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতে পেরে তিনিও আনন্দিত। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে সকল প্রস্তুতি রয়েছে।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় যশোরে ২২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এই নিয়ে জেলায় মোট ৭৫৪ জনের ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত হলো এরমধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১৬২ জন, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৩৭ জন, বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন, কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৮ জন, মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জনের ও শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।

সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. নাসিম ফেরদৌস জানান, চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অভয়নগর উপজেলা। এখানে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে সেখানে ৫৩৭ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে।

অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদুজ্জামান ডিটু জানান, অভয়নগরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার প্রধান কারণ হলো অভিশপ্ত ভবদহে পানি জমে থাকা। সেখানে ওভার ফ্লো হয়ে খানা খন্দে জমে থাকা পানি থেকে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, জমে থাকা পানিতে এডিশ মশা ডিম পাড়ে। ওই ডিম থেকে হাজার হাজার মশা জন্ম নিচ্ছে। ডা. ওয়াহিদুজ্জামান ডিটু আরও জানান, অভয়নগরে ডেঙ্গতে আক্রান্তদের অধিকাংশের বসবাস ভদবহ পাড়ে। সেখানকার মানুষ বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, যশোরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এমন আশংকায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মিত উঠান বৈঠক ও অবহিতকরণ সভা করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু সচেতনতার বিষয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ কর্মি ও কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের জণগনের সচেতন করার কাজে মাঠে নামানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সক্রিয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। তারাও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে কাজ করছেন।