আব্দুল্লাহ আল-মামুন, স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনাকে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত করতে যারা আইন করেছে তাদের মুখে এখন ভোট, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। আজ অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। বৈশ্বিকভাবেও খুবই উচ্চকিত মানবাধিকার প্রসঙ্গ। কিন্তু ১৯৭৫ সালে আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম সেদিন কোথায় ছিল মানবাধিকার?
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অব ফেম-এ শেখ রাসেল দিবসের উদ্বোধন ও শেখ রাসেল পদক প্রদান অনুষ্ঠানে গণবভন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ প্রশ্ন করেন তিনি।

তিনি ১৫ আগস্টের কালরাতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আজকে তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। একটা কেউ মারা গেলে বিচার চাওয়া হয়। আমরা কী অপরাধ করেছিলাম? ১৫ আগস্ট আমরা যারা অপনজন হারিয়েছি, তখন আমরা তো বিচার পায়নি। আমাদের অপরাধটা কি ছিল?’

‘অথচ এদের হাতেই তো বারবার, আমার ওপরেও কতবার আঘাত এসেছে! আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছে বোধহয় এদিনটি দেখার জন্য। ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল আমার বাবার নাম, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল, যেখানে তার নামটাও নেয়া যেত না এমন একটা পরিবেশ ছিল।

‘আমার অধিকার, আমার মানবাধিকার, আমার বাবা-মা হত্যার বিচার পাওয়া, ভাইয়ের হত্যার বিচার পাওয়া, এই অধিকার তো আমার ছিল। সেখান থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলাম। কিন্তু আমাদের সেটা সমাধান করতে হলো। বাংলাদেশে কি বিবেকবান কোনো মানুষ ছিল না?’
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ করতে যেসব বিচারক ‘বিব্রতবোধ’ করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন ‘খুব বড় বড় দার্শনিক’ হয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘আর বাংলাদেশ যে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি, সেই বাংলাদেশ যেন বিশ্বসভায় একটা মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। এটাই ছিল আমার লক্ষ্য। সে লক্ষ্য অর্জন করার জন্য স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এ রকম অন্যায় আর ঘটুক এটায় আমার চাওয়া। ‘আমার প্রশ্ন, আজকে আন্তর্জাতিকভাবে কত কিছু, মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদ, কতকিছুই হয়। কই? তখন তো কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।’

‘তাহলে আজকে আমরা মানবতার কথা, মানবাধিকারের কথা, এত গাল ভরা কথা শুনি কেন? আমার এই প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবে?’

অনুষ্ঠান শেষে সারাদেশে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প ( ২য় পর্যায় )-এর আওতায় স্থাপিত ৫০০০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ৩০০টি শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার- এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় একই সাথে শার্শা সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের উদ্বোধন করেন তিনি। এ উপলক্ষে শার্শা সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন। আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল, সহবারী কমিশনার (ভূমী) ফারজানা ইসলাম, শার্শা থানা ইনচার্য ওসি মামুন খাঁন প্রমুখ।

এ সময় সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন শার্শা সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্তরে শেখ রাসেল-এর জন্মদিন উপলক্ষে একটি গাছের চারা রোপন করেন।

এর আগে, শার্শা উপজেলা পরিষদ চত্তরে শেখ রাসেল-এর অস্থায়ী প্রতিকৃতে পুস্পস্তবক অর্পন করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু। উপজেলা কর্মকর্তা কর্মচারিদের পক্ষে পুস্পস্তবক অর্পন করেন নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল।

এ সময় উপজেলা অডিটোরিয়ামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেল ৫৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে যশোরের রচনা, চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা, আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতীক দুরন্ত প্রাণবন্ত নির্ভীক” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকালে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করে দিনটি পালন করে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল এর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) ফারজানা ইসলাম, শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন খান, পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ভূঁইয়া, উপজেলা প্রকৌশলী এম এম মামুন হাসান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ইউসুফ আলী, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল রাসেল সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেল -এর ৫৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে শার্শায় এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়।

এদিকে শার্শার নাভারন কলেজ চত্তরে শেখ রাসেল -এর ৫৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি গাছের চারা রোপন করেন করেজটি অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার প্রমুখ।