নিজস্ব প্রতিবেদক : ত্যাগ ও আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। পশু কোরবানি, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ নিয়ে দেশবাসী ‍উদযাপন করছেন ঈদ। তবে ভয়াবহ বন্যার শিকার সিলেটের অনেক পরিবারেই এ আনন্দের দেখা নেই। তারা ব্যস্ত জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে।

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রহিম আলী। প্রথম ধাপের বন্যার পানি নিজেদের বাড়ির পাশে এলেও দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় তলিয়ে গেছে বসতঘরসহ যাবতীয় মালামাল। বর্তমানে তিনি ৫ সদস্যের পরিবার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আগে আমি খুব কষ্ট করে একটা ঘর তৈরি করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে মোটামুটি ভালো ভাবে চলছিলাম। কিন্তু বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে সবকিছু কিনতে হচ্ছে। ঘর তৈরি করতে হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ১০ হাজার টাকায় তো একটা ঘর তৈরি হয় না। ধারদেনা করে ঘর তৈরি করার কাজ শুরু করছি। বাচ্চাদের নিয়ে তো থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমরার ঈদ আছে নি। যাও অন্যান্য বছর করতাম এবার তো বন্যায় আমাদের ঈদ আনন্দ হারিয়ে গেছে।

একই এলাকার বিধবা আখলিমা বেগম। স্বামী মারা গেছেন প্রায় দুবছর আগে। ২ মেয়ে নিয়ে এমনিতেই বেকায়দা রয়েছেন। তারমধ্যে বন্যায় বসতঘর বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। বানের জলে ঘর হারানো আখলিমা বলেন, আমার স্বামী তো ২ বছর আগে মারা গেছেন। ২ মেয়ে নিয়ে কোনোভাবে অন্যের ঘরে কাজকর্ম করে চলছিল সংসার। দিন শেষে নিজের বসত ঘরে এসে ঘুমাতে পারলেও এখন বন্যায় ঘরটি ভেঙে গেছে। আছি মহাকষ্টে।

আমার তো স্বামী হারিয়ে ঈদ কবে শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানের বন্যায় আর ঈদ আনন্দ হারিয়ে গেছে।

শুধু রহিম ও আখলিমা নয় সিলেটের প্রায় বন্যাদুর্গতদের কণ্ঠে এমন সুর। তাদের ঈদ আনন্দে ভাটা দিয়েছে বন্যা।

সরকারি হিসেবে সিলেটে চলমান বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৮০ হাজার ঘরবাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে ঘরবাড়ি হারানো ১০ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগই এখনও ভাঙা ঘর মেরামত করতে পারেননি। এছাড়া পানি নামায় এখনও দুই জেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।

ফলে এবারের ঈদ কাটছে আশ্রয়কেন্দ্রে বা অন্যদের ঘরে আশ্রিত হয়ে। অনেকের আবার ভাঙা ঘরে।

এবারের ঈদে কাপড়ের দোকান ও পশুর হাটেও বন্যার প্রভাব লক্ষ করা গেছে। অন্যন্য বছর বিপনী বিতানগুলো সপ্তাহ খানেক আগে ভিড় লেগে থাকলেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত নগরের একাধিক মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ফাঁকা।

হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ী সাব্বির মিয়া বলেন, অন্যান্য বছর তো সপ্তাহ খানেক আগ থেকে ভিড় থাকতো। কিন্তু এখন অলস সময় কাটাচ্ছি। মূলতও বন্যায় কারণে অনেকেই আর্থিক সমস্যায় আছেন আবার অনেকেই কর্ম হারিয়ে বেকায়দায় আছেন। এসব কারণে মার্কেটে ক্রেতা নেই।

জানা যায়, তিন দফার বন্যায় সিলেটের প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েক লক্ষ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও বর্তমানে পানি কমে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও বহু মানুষ এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। অনেকের বাড়ি ফেরা নিয়ে এখনও অনিশ্চিতা রয়েছে। ফলে এসব বানভাসিদের মধ্যে এবার ঈদের আনন্দ নেই।

বর্তমানে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরসহ ৭টি উপজেলার অনেক জায়গা এখনো বন্যা কবলিত রয়েছে। কয়েক দিন পানি কিছুটা কমেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকা এখনও ডুবে রয়েছে। রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত।

এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত বলেন, বন্যায় যা ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠা অসম্ভবকর। তবে আমরা বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ঈদ উপলক্ষে নতুন কাপড়চোপড়, সেমাই, দুধ, শুকনো খাবার, নগদ টাকা ইত্যাদি ত্রাণ সামগ্রী নিয়মিত বিতরণ করছি।

এছাড়াও শিশু খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।