বিশেষ সংবাদ | তারিখঃ মে ২১, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 2582 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : খোকন নন্দীর দুই স্ত্রী। সনাতন ধর্মাবলম্বী খোকনের প্রথম স্ত্রীও একই ধর্মের। তবে প্রথম স্ত্রী মীরা নন্দী দেবরের সঙ্গে সম্পর্ক জড়ানোর জেরে খোকনও সম্পর্কে জড়ান অন্য এক নারীর সঙ্গে। পরে ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হয়ে হাবিবা আকতার খানম নামে সেই নারীকে বিয়ে করেন খোকন।
তবে বিপত্তি ঘটে যখন হার্ট অ্যাটাক করে খোকনের মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খোকন। এরপরই তার লাশ নিয়ে শুরু হয় দুই ধর্মের দুই স্ত্রীর টানাটানি। দুই স্ত্রীই খোকনের লাশের দাবিদার হলে মামলা গড়ায় আদালতে। তবে মীমাংসা না হওয়ায় প্রায় আট বছর ধরে খোকনের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পড়ে রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, খোকনের লাশ প্রথমে বারডেম হাসপাতালের মর্গে ছিল। সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আদালতের আদেশে লাশটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের ডিপ ফ্রিজে। প্রথম পক্ষের স্ত্রী আদালতে কালক্ষেপণ করার ফলে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর সহকারী জজ আদালত (দেওয়ানি ২৫২/১৪ ঢাকা) বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ও তদারকিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মরচুয়ারিতে খোকনের মরদেহ সংরক্ষণের আদেশ দেন। এরপর ১৫ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ লাশটি গ্রহণ করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সহকারী সেকান্দার আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে লাশটি আমাদের এখানে রয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বারডেম কর্তৃপক্ষ ব্যাগে ভরে লাশটি আমাদের কাছে দিয়ে গেছে। আদালতে মামলা থাকায় লাশটি আমাদের মর্গে ডিপ ফ্রিজে রাখা আছে।’
জানা গেছে, ১৯৮০ সালে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামা করে ধর্ম পরিবর্তন করেন খোকন চৌধুরী। তিন বছর পরে ১৯৮৪ সালে হাবিবা আকতারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে কোনো সন্তান নেই।
খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবার ভাষ্য, খোকনকে বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার আগের স্ত্রী ও সন্তান আছে। কিন্তু আগের সেই স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে খোকনের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তারা কখনোই খোকনের খোঁজখবর নিত না। কিন্তু মারা যাওয়ার পর থেকে তারা লাশের দাবি করছে। সিএমএম কোর্ট হয়ে এখন মামলাটি চলছে ঢাকা সহকারী জজ আদালতে।
হাবিবা আকতার বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে বিয়ের আগে মুসলিম হয়েছেন। আট বছর ধরে আমি চাইছি স্বামীর লাশ দাফন করতে। মুসলিম হিসেবে মারা গেলে দ্রুত লাশ দাফন করার নিয়ম আছে। অথচ আমার স্বামীর লাশ মর্গে আছে প্রায় আট বছর। আমি ওদের (স্বামীর প্রথম স্ত্রী ও সন্তান) বলেছি, লাশটি দ্রুত দাফন করা উচিত। কিন্তু তারা তা মানতে নারাজ।’
তার বয়স এখন ৬০ বছর জানিয়ে এই নারী বলেন, ‘এই বয়সে এসব করতে আর ভালো লাগছে না। আমি চাইছি স্বামীর লাশের বিষয়টি সুরাহা হোক। আদালতের রায় যদি তাদের পক্ষে যায় তাহলে তারা লাশ নিয়ে যাবে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই মামলাটি শেষ করতে চাচ্ছে না।’
এদিকে খোকনের প্রথম স্ত্রী মীরা নন্দীর সঙ্গে ঢাকাটাইমস একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।