বিল্লাল হোসেন, মণিরামপুর প্রতিনিধি : গেল বছরের জুন মাসে এক-দেড়ফুট গভীর করে খুঁড়ে রাখা হয়েছে যশোরের মণিরামপুরের ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার গ্রামের দুটি রাস্তা। খুঁড়ে রাখা পর্যন্তই শেষ। এরপর আর রাস্তা দুটির কাজ এগোয়নি। খুঁড়ে রাখা রাস্তায় একবছর ধরে কাদার সাথে সংগ্রাম চলছে স্থানীয়দের। একটু বৃষ্টি হলেই সে রাস্তা দুটোতে কাঁদা জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এলাকাবাসীসহ পথচারীরা। কবে এ দুর্ভোগ শেষ হবে, আদৌ রাস্তা দুটি সংস্কার হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
তবে ঠিকাদার বলছেন টাকা না থাকায় রাস্তায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। টাকা পেলে আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করব।
গত বছরের এপ্রিল মাসে ঝাঁপা ইউনিয়নের হানুয়ার আমতলা সড়কের ৩৬৪ মিটার ও একই গ্রামের আফতাব গাজীর মোড় হতে হানুয়ার মণ্ডলপাড়া হয়ে পুলেরহাট রাজগঞ্জ সড়ক পর্যন্ত ২ হাজার ৪৮০ মিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের টেন্ডার হয়। মাগুরার স্বাধীন এন্টারপ্রাইজের অনুকুলে ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৪৬ টাকা ও ২ কোটি ৩০ লাখ ৪৯ হাজার টাকায় কাজ দুটোর অনুমোদন দেওয়া হয়। স্বাধীন এন্টারপ্রাইজের পক্ষে কাজের দায়িত্ব নেন মণিরামপুরের আবু সাইদ নামের এক ঠিকাদার। গত জুন মাসের দিকে ঠিকাদার রাস্তা খুঁড়ে রাখেন। এরপর আর কাজ করেননি। একটু বৃষ্টি হলে এখন রাস্তা দুটিতে কাঁদা জমে। শুরু হয় কাঁদার সাথে পথচারীদের সংগ্রাম। জনগনের ভোগান্তি নিয়ে এরআগেও এরাস্তার কথা বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর রাস্তা দুটির সংস্কার কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ঠিকাদার কাজ না করায় অনুমোদন বাতিল চেয়ে আবেদন করেন
উপজেলা প্রকৌশলী। এরপর আড়াই কিলোমিটার খুঁড়ে রাখা রাস্তাটিতে কিছু অংশে নামমাত্র বালু ও ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে। বাকি রাস্তা পড়ে আছে খুঁড়ে রাখা অবস্থায়। স্থানীয় বিল্লাল হোসেন বলেন- আমার বাড়ির সামনে থেকে খালিয়া মাদরাসা মোড় পর্যন্ত ৩৫০ মিটার রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। একবছর ধরে রাস্তায় কাজ করেনি ঠিকাদার। রাড়ি থেকে কলেজে যেতে আগে এক কিলোমিটার পথ ছিল। রাস্তা খুঁড়ে রাখায় এখন চার কিলো পথ ঘুরে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে।
বিল্লাল হোসেন আরও বলেন- এ রাস্তার মাথায় খালিয়া দাখিল মাদরাসা ও খালিয়ার মোড়। বৃষ্টি হলে মাদরাসায় যেতে গেলে ও মোড়ে সদাইপাতি আনতে গেলে চার কিলো পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন- এখন বৃষ্টিতে যে কাদা হচ্ছে তাতে ১০ দিনেও কোনো লোক রাস্তা দুটো দিয়ে চলাচল করতে পারবেন না। হানুয়ার গাজীর মোড় এলাকার ইসলাম আলী বলেন- আমাদের মাঠের ফসল ঘরে তুলতে যে কি ভোগান্তি পেতে হচ্ছে তা বলে শেষ করা যাবে না। রাস্তায় খোঁড়া গর্তে পানি কাঁদা জমে থাকছে। মাঠের ফসল গাড়িতে করে তোলা যাচ্ছে না। বাড়তি খরচ দিয়ে মাথায় করে আনতে হচ্ছে। আমাদের কষ্টের শেষ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- রাস্তা দুটিতে চলাচলে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে বহুবার জানাইছি। জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে চারবার ফোনে জানাইছি। তাঁরপরও রাস্তার কাজ করেনি ঠিকাদার।
মণিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন- হানুয়ার গ্রামের রাস্তা দুটোর কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে কমাস আগে। খোঁড়াখুঁড়িরও একবছর পার হতে যাচ্ছে। ঠিকাদারকে কয়েকবার চিঠি করেছি কাজ শেষ করার জন্য। অবশেষে কাজ বাতিল চেয়ে আবেদন করেছি। তারপর ঠিকাদার এক কিলোমিটার রাস্তায় বালু ও খোয়া দিয়েছেন। বিদ্যুৎ কুমার বলেন- জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে বুঝতে পারছি। কাজ শেষ করার জন্য আবারও ঠিকাদারকে বলা হবে।
রাস্তা দুটির সংস্কার কাজের ঠিকাদার আবু সাইদ বলেন- টাকা না থাকায় কাজ করতে পারিনি। জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। তাঁরকাছে ১ কোটি টাকা বিলের আবেদন করেছি। টাকা পেলে আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করব।